আমাদের দেশে লোকবল সঙ্কটের কথা শোনা যায়; কিন্তু এ ক্ষেত্রে রেকর্ড করেছে ছেংগারচর পৌরসভা। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভাটি ‘ক’ শ্রেণীর পৌরসভা হওয়া সত্তে¡ও নাগরিকরা সবধরনের সুবিধাবঞ্চিত। পৌরসভায় ১৫৫ জন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন। ১৪০টি শূন্য পদ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। পৌরসভার ৫০ কিলোমিটার সড়কে সড়কবাতি রয়েছে মাত্র ৫২টি। রাত নামলে সড়কে তৈরি হয় ভুতুড়ে পরিবেশ। একটি সহযোগী দৈনিকের মতলব (চাঁদপুর) সংবাদদাতার প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের শর্ত অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় পাকা রাস্তা, বিদুৎ, পানি সরবরাহ, সড়কবাতি, নালা-নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকার কথা। প্রথম শ্রেণীর মর্যাদাপূর্ণ এই ছেংগারচর পৌরসভায় এসব শর্ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশও পূরণ হয়নি। পৌর বাসিন্দারা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেলেও সেবার ক্ষেত্রে ভোগান্তির শেষ নেই। পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ৫ এপ্রিল পৌরসভাটি ‘গ’ শ্রেণীতে প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১১ সালের ৭ আগস্ট ‘খ’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়। পরে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি একে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। পৌরসভার বাসিন্দারা বলেন, ছেংগারচর পৌরসভার ৫০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অর্ধেকের বেশিই কাঁচা। সামান্য পাকা রাস্তার বেশির ভাগ জরাজীর্ণ। বর্ষা মৌসুমে নাগরিকরা ভোগান্তিতে পড়েন। ২৭ বর্গকিলোমিটারের সীমারেখায় পৌরসভাটির এখনো অনেক পরিবার বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিনযাপন করছে। পাম্পের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যের সাপ্লাইয়ের পানির সুবিধা পেয়েছে ১০ হাজার ৬০০ পরিবারের মধ্যে ৩২৯টি পরিবার। ডাম্পিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পৌরসভার যত্রতত্র দেখা যাচ্ছে ময়লার স্তূপ। বৃষ্টি হলে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
পৌর বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইবনাল মইন আহমেদ বলেন, পৌরসভার উন্নয়ন রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে আটকে ছিল। আশা করি, এবার নাগরিক সুবিধা বাড়বে। পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম বলেন, জনবল বৃদ্ধির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। ‘ক’ শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে উন্নয়ন অনেক কম হয়েছে। পৌরসভাটির নিজস্ব আয় তেমন না থাকায় উন্নয়নকাজ করা যাচ্ছে না।
ছেংগারচর পৌরসভার সমস্যা অনেক; এর মধ্যে লোকবল সঙ্কট তীব্র। কিন্তু লোকবল পূরণ করা হচ্ছে না। এ জনবল নিয়ে পৌরসভাটি কতটা গতিতে চলতে পারে- এটিই পৌরবাসীর কোনোভাবে বুঝে আসে না। মাত্র ১৫ জনবল কিভাবে ১৫৫ জনের কাজ করবে- এটি জনমনে প্রশ্ন।
আমরা মনে করি, কোনো এলাকায় শুধু পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করলেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না। সাথে সাথে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে ছেংগারচর পৌরসভার বাসিন্দাদের নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে অতিসত্বর প্রয়োজনীয় জনবল দেয়ার ব্যবস্থা করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, এটিই প্রত্যাশা।



