প্রকৃতিতে শীতের আগমন, বিশেষ প্রস্তুতি প্রয়োজন

শীতকালীন মৃত্যুর হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্নপর্যায়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

দেশে প্রতি বছর স্বাভাবিক নিয়মেই শীত আসে। এবারো এসেছে। শীত অনেকের কাছে বেশ উপভোগ্য হলেও গরিব সাধারণ মানুষের জন্য এ এক দুর্বিষহ ঋতু। তাদের দুর্ভোগ প্রায়ই সীমা ছাড়িয়ে যায়। অনেক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবিশেষ শীতে গরিব মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। কিন্তু জাতীয়পর্যায়ে শীত মোকাবেলার তেমন কোনো প্রস্তুতি আমাদের থাকে না। ফলে প্রতি বছর বেশ কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে। প্রচণ্ড শীতে বয়স্ক মানুষসহ অনেক হতদরিদ্র মানুষের জীবনহানি পর্যন্ত ঘটে। এবার যাতে সেসব না হয়, সে জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

ইতোমধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে শীত জেঁকে বসেছে। উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শনিবার সকালে ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি। এদিন তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে। এ ছাড়াও সামনে শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস আছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি ডিসেম্বর থেকে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আঘাত হানতে পারে। তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এ সময়ে তিন থেকে আটটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি), মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি) এবং দুই থেকে তিনটি তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি কোথাও শিলাবৃষ্টি ও বজ্রঝড়ও দেখা দিতে পারে।

শীতকালে বাংলাদেশে এক ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও জমে ওঠে। বিত্তবানদের কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতির একটি বড় অংশ শীতের আগমনে শুরু হয়। কিন্তু সারা দেশে ছিন্নমূল, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। তীব্র শীত খুব বেশি দিন স্থায়ী না হলেও এ সময় এসব মানুষের জীবিকা অর্জনের পথ স্তব্ধ হয়ে যায়। ফলে তারা অসহায় হয়ে পড়েন। এ জন্যই তাদের জন্য সরকারের বিশেষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি থাকা জরুরি।

শীতকালে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যাটি বড় হয়ে দেখা দেয়। বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধরা শীতকালীন রোগে বেশি আক্রান্ত হন। অনেকের মৃত্যুও ঘটে।

গত বছরের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশে শৈত্যপ্রবাহে বছরে গড়ে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, এরপরই রয়েছে ডিসেম্বর মাস। আরেক গবেষণার তথ্য মতে, শৈত্যপ্রবাহে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের চেয়ে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বেশি মারা যায়। এ মৃত্যু অনাকাক্সিক্ষত এবং একটু যত্নশীল হলেই তা রোধ করা সম্ভব।

শীতকালীন মৃত্যুর হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্নপর্যায়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। শীতকালীন অসুস্থতা থেকে রক্ষা পেতে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকার গণমাধ্যমের সাহায্য নিতে পারে।

বাংলাদেশ শীত কখনো দুর্যোগ হিসেবে ঘোষিত হয়নি। কিন্তু দুর্যোগে যে ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয় শীতকালের ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা সে রকমই। সরকার দুর্যোগ মোকাবেলার মতো করেই শীতকালীন সঙ্কট মোকাবেলায় শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। তাদের নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত জীবনযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।