নিত্যপণ্যের বাজার আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। বেশ কিছু জিনিসের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি সবজির দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যে সবজির দর গত এক বছরে সহনীয় পর্যায়ে ছিল তারও দাম আকাশচুম্বী। বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। আটা, ডালসহ আরো কিছু পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
শুধু আলু-পটোল ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দাম ৮০-১৪০ টাকার মধ্যে। সরকারি সংস্থার হিসাব বলছে, স্বৈরাচারের পতনের পর বাজারে সবজির দাম যে পর্যায়ে নেমে এসেছিল, সেখান থেকে গত এক বছরে ১৬টি সবজির দাম বেড়েছে গড়ে ২৬ শতাংশ।
এক দিকে দেশে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে, অন্য দিকে বাড়ছে পণ্যমূল্য। চাপে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিতে শুরু করেছে, কেন বাজার দরের এই উল্লম্ফন। স্বৈরশাসনের সর্বব্যাপী অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা না থাকলেও কেন পণ্যমূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধির গত ১৫ বছরের সেই প্রবণতা নতুন করে দেখা দিচ্ছে?
গণমাধ্যমের অনুসন্ধান থেকে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কিছু কারণ জানা যায়। পাইকারি ও খুচরা বাজার, আড়তদার ও ক্রেতা-বিক্রেতার বক্তব্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টের বৃষ্টি ও বন্যায় সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে সবজির দাম বেড়েছে। এর সাথে সিন্ডিকেট এবং কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত মুনাফার লোভও দাম বাড়ার কারণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু দিন চাঁদাবাজি, পরিবহন ও বাজারকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট ছিল না। এতে সবজির দাম কমে গিয়েছিল; কিন্তু এখন আবার শুরু হওয়ায় দামও বেড়েছে।
পণ্যমূল্য বৃদ্ধির যেসব কারণ উঠে এসেছে তাতে দ্বিমত করার কিছু নেই। বৃষ্টি-বাদলের ওপর মানুষের হাত নেই; কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এবং অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। সরকার আন্তরিক হলে এদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া যায়; কিন্তু নতুন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কতটা সম্ভব!
আমাদের বিবেচনায়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবও বাজারে পড়ছে। সুযোগ-সন্ধানীরা এগুলোর অপেক্ষাতেই থাকে। বিভিন্ন মহল থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলা করে তোলার অপচেষ্টা এরই মধ্যে দৃশ্যমান। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা মাঠে নেমেছে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে অভ্যস্ত এই দুর্বৃত্তরা পরিস্থিতি ঘোলা করে আবারো ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরিয়ে আনতে চায়। রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব ও সঙ্ঘাতের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তারই আলামত। এর সাথে যোগ হয়েছে চাঁদাবাজির প্রভাব। অর্থাৎ স্বৈরশাসকের সময় যে ধরনের পরিবেশ ছিল এই মুহূর্তে দেশের পরিস্থিতি তার চেয়ে খুব একটা ভিন্ন নয়। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এই অস্থিরতারই প্রতিফলন।
সরকারের একার পক্ষে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ অসম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলো সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সংস্কার, বিচার, নির্বাচন ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য ও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে অবস্থার উন্নতি হওয়া সম্ভব।
তবে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে নজরদারি বাড়িয়ে স্বল্প আয়ের মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।