বাংলাদেশ-পাকিস্তান জেইসি বৈঠক, আত্মঘাতী নীতি আর নয়

আন্তর্জাতিক বিশ্বে একঘরে হয়ে থাকা নয়; বাংলাদেশকে সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক আগামীকাল সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। ২০০৫ সালের পর প্রথম এ বৈঠক হতে পারছে শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকার উৎখাত হওয়ায়। হাসিনা সরকারের নীতি মূলত ছিল ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতির অন্ধ অনুসরণ। বাংলাদেশকে সব দিক থেকে ভারতের লেজুড়ে পরিণত করার একটা বড়ো কর্মসূচির অংশ ছিল এটি। এ দিক থেকে বরং শেখ মুজিবের নীতি ছিল বাস্তবসম্মত। স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তান সফর করেন। পাক প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোকে ঢাকায় স্বাগত জানান।

বর্তমান বিশ্বে কোনো দেশ কারো চির শত্রু বা মিত্র নয়। পারস্পরিক স্বার্থ বা নিরাপত্তার নিরিখে পুরনো শত্রু একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র হতে পারে; ঐতিহ্যগত মিত্রও হয়ে উঠতে পারে চরম বৈরী। ব্যক্তিগত বা দলীয় লাভালাভের বিবেচনায় কোনো দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অবকাশ নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই আত্মঘাতী নীতি অনুসরণ করেছে।

জুলাই বিপ্লবের পর আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অনেকটা মুক্ত। জাতীয় স্বার্থ বিশেষ করে অর্থনৈতিক, আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিবেচনায় বাংলাদেশ নিজের পররাষ্ট্র সম্পর্ক গড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন এর প্রতিফলন। এ ক্ষেত্রে সোমবারের জেইসি বৈঠক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পাক অর্থমন্ত্রী আহাদ খান চিয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল এসেছে। জেইসি বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন বাংলাদেশ পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন।

সত্য বটে, দুই দেশের সুসম্পর্ক থেকে উভয়ের লাভবান হওয়া সম্ভব। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষিতে সহায়তা, আর্থিক সেবা খাত, ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার সুযোগ যথেষ্ট।

সোমবারের বৈঠকে পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, ঘাটতি কমানোসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।

গত এপ্রিলে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায় এসে বলেছিলেন, বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণশিল্প পাকিস্তানের জন আকর্ষণীয় হতে পারে। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রেও সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন প্রতিষ্ঠা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে নতুন খাত সংযোজন, শুল্ক ও অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার, যৌথ বিনিয়োগের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, পাকিস্তানের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এতদিন অনেকটা একতরফা আটকে রাখা হয়েছিল। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আমাদের স্বার্থ আছে।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারের। আমাদের আমদানি বেশি; কিন্তু রফতানি কম। বাণিজ্যঘাটতির কারণ এটিই। ঘাটতি কমাতে আরো বেশি করে শুল্কমুক্তভাবে চা, পাটজাত পণ্য, ওষুধ, তৈরী পোশাক, ইলেকট্রনিক-সামগ্রী, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করা হবে জেইসি বৈঠকে।

আমরা পাকিস্তানের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক চাই। আমাদের আর আত্মঘাতী নীতি অনুসরণের সুযোগ নেই। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের উন্নতি ঘটাতে হবে। তাতে বাণিজ্য বাড়বে, পর্যটন ও ব্যবসায়িক লেনদেন বাড়বে।

সম্প্রতি শিল্পের কাঁচামাল, চাল এবং অন্যান্য পণ্য আমদানির জন্য ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে। আমরা কেন সে সুযোগ নেবো না!

আন্তর্জাতিক বিশ্বে একঘরে হয়ে থাকা নয়; বাংলাদেশকে সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।