জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে বহুল কাঙ্ক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার শত অপচেষ্টার মধ্যে একটি প্রচারণা উঠানো হয়েছিল- যথাসময়ে ভোট আয়োজন করবে না তারা। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের এ ভাষণের মধ্যে দিয়ে সেই দ্বিধা-সংশয় কেটে গেছে। জাতি নির্বাচনের সঠিক দিনক্ষণ জেনে গেছে, এখন দরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করে জাতিকে একটি ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া। ভোটের দিন পর্যন্ত ধাপে ধাপে যত চ্যালেঞ্জ আছে তা মোকাবেলায় জোরালো প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথাও সিইসি জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব অংশীজন নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করলে আশা করা যায়, একটি নির্বাচিত সংসদ যথাসময়ে পাওয়া যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ। পুলিশ বাহিনী দুর্বল হয়ে যাওয়ার পরও এই পর্যন্ত সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় সফলতা দেখিয়েছে। এর মধ্যে ফ্যাসিবাদী সরকারের পালিয়ে যাওয়া সদস্যরা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশকে অকার্যকর করার যারপরনাই ষড়যন্ত্র করেও ব্যর্থ হয়েছে। এদের অপচেষ্টা থেমে না থাকলেও ধীরে ধীরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তুতি দৃঢ়তর হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সর্বমোট ৯ লাখ সদস্য নিয়োগ করতে যাচ্ছে সরকার। আশা করা যায়, যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা সক্ষম হবে।
বহু কারণে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ইতিহাসের নজির সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। দেশের সব নাগরিক যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রবাসী, সরকারি হেফাজতে থাকা লোকেরা এবং নির্বাচনে দায়িত্ব পালনরতসহ সবাই এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে একগুচ্ছ নিয়ম করেছে। এগুলোর কঠোর প্রয়োগে সর্বোচ্চ প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে। ভয়ভীতি, প্রলোভন, প্রবঞ্চনা ও সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ভোটের দিন একটি উৎসবে পরিণত হবে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-গোষ্ঠী-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই এতে অংশ নেবেন বলে আশা করেন সিইসি।
সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটও একসাথে আয়োজন করা হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে সরকারের উদ্যোগে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে। সনদের ৮৪টি সুপারিশের অংশবিশেষও যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে দেশে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হবে। এ নির্বাচনে ভোটাররা হ্যাঁ ভোট দেয়ার মাধ্যমে সনদকে অনুমোদন করার সুযোগ পাবেন।
সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন- এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা শুরু করে। সংস্কারের চূড়ান্ত রূপরেখা ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের হোতা হাসিনার দণ্ড দিয়ে বিচারের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এখন নির্বাচন সফলের প্রশ্ন। অন্তর্বর্তী সরকার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বাদবাকি দায়দায়িত্ব রাজনৈতিক দল ও দেশের জনগণের। রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। শুধু নিজেদের বিজয় একমাত্র লক্ষ্য না বানিয়ে দেশের কল্যাণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনগণকে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল হতে হবে, সুবিবেচনাপ্রসূত নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। তবেই বাংলাদেশের আকাশে নতুন সূর্য উদিত হবে।



