জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দূর করে ঐকমত্যে পৌঁছার দায়িত্ব সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই ছেড়ে দিয়েছে। এ জন্য সরকার সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে। গত সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনার বিষয়ে সরকারের অবস্থান- ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সাড়ে ১৫ বছরে আলোচনা করে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে একসাথে আন্দোলন করেছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাই নিজেরা বসে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব নয়।
গত ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দু’টি বিকল্প সুপারিশ জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। একটিতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। নির্ধারিত সময়ে সংসদ এটি করতে ব্যর্থ হলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে। অন্য বিকল্প সুপারিশটিও প্রায় একই। তবে সেখানে বলা হয়েছে, ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করা হবে। না হলে কী হবে, তার উল্লেখ নেই। গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের তিনটি স্তর-আদেশ জারি, গণভোট এবং আগামী সংসদকে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসবেও ক্ষমতা দেয়া। তিনটি স্তর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য আছে। তবে এখন মূল মতবিরোধ গণভোটের সময় এবং সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত রাখা হবে কি না তা নিয়ে।
সরকার বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর দিকনির্দেশনা পেলে তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যে সুযোগ নেই, তা সবার বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এসেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠেয় আলোচনার আয়োজন সরকার করবে না। এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক দীর্ঘ আলোচনায় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ঐকমত্যে আসতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে দলগুলো নিজ উদ্যোগে পারস্পরিক আলোচনায় বসবে কি না বা ঐকমত্যে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, দলগুলোর মধ্যে জাতীয় স্বার্থের চেয়ে দলীয় সুবিধাকে প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা আছে।
আমরা মনে করি, দলগুলোর মধ্যে আলোচনায় একজন মধ্যস্থতাকারী থাকা দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারেন।
জাতির এই ক্রান্তিকালে সরকার ও রাজনৈতিক দল কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।



