শিক্ষকদের অবসরভাতা পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা, জরুরি পদক্ষেপ দরকার

কল্যাণ সুবিধা বোর্ডের সব টাকা ও লেনদেন হতো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাংকটি তারল্য সঙ্কটে পড়েছে। এতে কল্যাণ বোর্ডের ৩০ কোটি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ব্যাংকটি। আওয়ামী দুর্বৃত্তরা অর্থ লুটে নেয়ায় ব্যাংকটি এই তারল্য সঙ্কটে পড়েছে।

শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখান। সাথে নিজেদেরও স্বপ্ন থাকে, আকাঙ্ক্ষা থাকে। চাকরি শেষে অবসর জীবনের ভাতার ওপর তাদের একটি নির্ভরশীলতা থাকে। সেই ভাতা দিয়ে তাদের অতীব প্রয়োজনীয় কিছু কাজ করেন। এই অবসরভাতা পেতে শিক্ষকরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন। অবসরভাতার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে অনেকের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ভেঙে যায়। অনেকে জীবদ্দশায় অবসরভাতা পেতে ব্যর্থ হন। অবসরভাতা তার আর ভোগ করা হয় না।

একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ৮৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার সঙ্কট কাটেনি। তারা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন চার বছর ধরে। দীর্ঘদিনের সৃষ্ট সঙ্কট কাটাতে এখনই প্রয়োজন ৯ হাজার কোটি টাকার অর্থ। তবে সম্প্রতি সরকার দিয়েছে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার তহবিল। এই টাকার লভ্যাংশ দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরকালীন প্রাপ্য ভাতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকার বড় একটি অংশ নেয়া হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকেই। আর এ জন্য চাকরিকালীন তাদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ টাকা মাসে কেটে রাখা হয়। কল্যাণ সুবিধার জন্য কাটা হয় মূল বেতনের ৪ শতাংশ। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রত্যেকের কাছ থেকে বছরে ১০০ টাকা (৭০ টাকা অবসরের জন্য ও ৩০ টাকা কল্যাণের জন্য) নেয়া হচ্ছে। বাকি টাকা সরকারি তহবিল ও চাঁদা জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেয়া হয়। নিজেদের জমানো টাকা পেতে শিক্ষক-কর্মচারীরা কেন বছরের পর বছর অপেক্ষা করবেন, সঙ্গত কারণেই সে প্রশ্ন সামনে আসে।

উচ্চ আদালত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ছয় মাসের মধ্যে অবসরভাতা প্রদানের আদেশ দিয়েছেন। তারপরও শিক্ষকদের অবসরভাতা প্রদানের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি না করে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

শিক্ষকদের অবসরভাতা-সংক্রান্ত সমস্যার উদ্ভব হয়েছে তহবিল সঙ্কটের কারণে। সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায় সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো। আইন কিংবা নীতিমালা যাই থাকুক না কেন, সেসব পরিবর্তন করতে হবে। কিভাবে ৮৮ হাজার শিক্ষককে দ্রুত তাদের অবসরভাতা দেয়া যায়, সরকারকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, কল্যাণ সুবিধা বোর্ডের সব টাকা ও লেনদেন হতো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাংকটি তারল্য সঙ্কটে পড়েছে। এতে কল্যাণ বোর্ডের ৩০ কোটি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ব্যাংকটি। আওয়ামী দুর্বৃত্তরা অর্থ লুটে নেয়ায় ব্যাংকটি এই তারল্য সঙ্কটে পড়েছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা পেশাজীবনে একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। তিনি শিক্ষকদের সুবিধা-অসুবিধা বোঝেন। আইন ও পদ্ধতিগত কারণেও শিক্ষকরা ভোগান্তির শিকার হন। এক্ষেত্রে কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা সংশোধনে তার সরকার উদ্যোগী হবে। ৮৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর অবসরভাতা-সংক্রান্ত সমস্যাটির সাথে লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য জড়িত। কর্তৃপক্ষ জরুরি সমাধানের পদক্ষেপ নিলে অবসরযাপনকারী শিক্ষক ও তাদের পরিবার উপকৃত হবে।