জেলা পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কার্যালয়, অসহায় নারীরা উপকৃত হচ্ছেন

জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। সেই লক্ষ্যেই জেলা আদালতে লিগ্যাল এইড কার্যালয় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সমাজের অসহায় নারীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দেশের সব জেলা আদালতে লিগ্যাল এইড কার্যালয় চালু করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১২টি জেলা আদালতে কাজ শুরু করেছে লিগ্যাল এইড কার্যালয়। ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ। এ কার্যালয়ে ভুক্তভোগী নারীরা বিয়েবিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, ভরণপোষণ এবং শিশু-সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও তত্ত¡াবধানের মতো জরুরি বিষয়ে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন। এ কার্যালয় মূলত বাদি-বিবাদির মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে আপসরফার চেষ্টা করে। কোনোভাবে নিষ্পত্তি না হলে পক্ষগুলোকে নিয়মিত মামলা করার সুযোগ করে দেয়। মামলার আগে মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করে নতুন বিধান করেছে সরকার। সেই বিধানের আলোকেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে লিগ্যাল এইড কার্যালয়।

মাত্র গত সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া এই কার্যালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে সহযোগী দৈনিকের রিপোর্ট অনুযায়ী অনেক গ্রামীণ নারীই সুফল পাচ্ছেন।

জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। সেই লক্ষ্যেই জেলা আদালতে লিগ্যাল এইড কার্যালয় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গত দুই মাসে ১২টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে নারীদের অভিযোগ এসেছে পাঁচ হাজার ৯১৬টি। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ১২৫টি অর্থাৎ প্রায় ৮৭ শতাংশ আবেদনই পারিবারিক ও যৌতুকের অভিযোগসংক্রান্ত। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে তিন হাজার ৪১টি বা ৫১ শতাংশ।

আমাদের নারীরা পারিবারিক বা সামাজিকভাবে নিপীড়নের শিকার; এটি অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা। বিশেষ করে গ্রামের লাখো নারী দাম্পত্য জীবনে নানাভাবে নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হন। এ নিয়ে পারিবারিক আদালত কাজ করলেও সেখানে মামলা করার মতো সুযোগ সামর্থ্য বেশির ভাগেরই থাকে না। মামলা করার কারণেও অনেকে নির্যাতনের মুখে পড়েন। এজন্য সরকারিভাবে মধ্যস্থতার এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। মাত্র দুই মাসে ৫১ শতাংশ অভিযোগের ইতিবাচক নিষ্পত্তি হওয়া মোটেই সামান্য নয়। মামলা মোকদ্দমায় গিয়ে এদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়নি- এটাই স্বস্তির।

গ্রাম পর্যায়ে আইনের প্রয়োগ বেশ কম। বয়স না হতে বিয়ে, স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে স্বামীর চলে যাওয়া, কথায় কথায় যৌতুকের দাবি, তালাক দেয়া, ভরণপোষণ না দেয়া, সন্তানের দায়িত্ব না নেয়া এবং স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বিয়ের মতো অগণিত ঘটনা গ্রামীণ নারীদের জীবনের সার্বিক অনিশ্চয়তারই চিত্র। এই অনিশ্চয়তা দূর করতেই সরকার মধ্যস্থতার বিধান করেছে। একজন বিচারক বলেছেন, নারীরা মধ্যস্থতা করতে চান, বিশ্বস্ত জায়গা পান না। মামলার আগে মধ্যস্থতার এই প্রক্রিয়া তাই খুব জরুরি। তবে এই ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য লিগ্যাল এইড অফিসে জনবল বাড়ানো দরকার।

আমাদের বিবেচনায়, গত দুই মাসে লিগ্যাল এইড অফিসের যেটুকু কার্যকারিতা দেখা গেছে তা যথেষ্ট সন্তোষজনক। দেশের সব জেলা আদালতে দ্রুত এই অফিস চালু করা যেতে পারে। এর ফলে নির্যাতিত অসহায় নারীদের জীবন পুরোপুরি পাল্টে যাবে এমন নয়, তবে তাদের জীবনের চরম অনিশ্চয়তা কিছুটা হলেও কেটে যাবে।