বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সম্পর্ক কূটনীতিতে নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের বিস্ময়কর সম্পর্ক বিশ্বে আর কোথাও দেখা যায় না। দিল্লি মুখে বাংলাদেশের কল্যাণ কামনা করছে। বরাবর বাংলাদেশকে বন্ধু দাবি করছে। কাজের ক্ষেত্রে করছে ঠিক এর উল্টোটা। বিশ্বের আর কোনো প্রতিবেশী দেশে এমনটা দেখা যায় না। শত্রুতা কিংবা সম্পর্কের অবনতি হলে তা ক‚টনীতির ভাষায় পরিষ্কার প্রতিফলিত হয়। তাই দুটো দেশের সম্পর্কের মাত্রা স্পষ্ট থাকে। দিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্ক ক‚টনীতির কোনো মানদণ্ডে এখন যাচাইযোগ্য নয়। দেশটি যা বলছে, তার সাথে কাজের মিল নেই। সর্বশেষ গুপ্ত হত্যার ঘটনা নিয়ে দেশটির প্রতিক্রিয়া সেই ধোঁয়াশাপূর্ণ অবস্থা আরো রহস্যময় করে দিয়েছে।
ওসমান হাদির অভিযুক্ত হত্যাকারীরা ভারতে পালিয়ে গেছে গোয়েন্দা সূত্রগুলো এমন খবর দিচ্ছে। এ অবস্থায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। পতিত হাসিনা প্রকাশ্যে ভারত থেকে মানুষ হত্যার উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে তার ওইসব হুমকির অডিও প্রকাশ হচ্ছে। হাইকমিশনারকে তলব করে হাসিনার কর্মকাণ্ড অবসানের বার্তা দেয়া হয়েছে। তাতে আহ্বান করা হয়েছে, ভারত সরকারের কাছে ওসমান হাদির হত্যাকারীরা সে দেশে প্রবশ করলে তাদের যেন আটক করে ফেরত পাঠানো হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবিকে নয়াদিল্লি প্রত্যাখ্যান করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশবিরোধী কাজে সে দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। একটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সত্যের শতভাগ বিপরীত কথা কিভাবে বলতে পারে, সেই প্রশ্ন এখন আলোচনায়।
হাসিনা পালিয়ে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে ভারতের মাটিতে বসে ক্রমাগত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মী ও গুম খুন মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা দেশটিতে আশ্রয় পেয়েছে। সেখানে থেকে তারা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের ছক কষে যাচ্ছে। এর সর্বশেষ নজির ওসমান হাদির ওপর গুপ্ত হামলা। এর পেছনে যারা জড়িত সবাই ভারতে পালিয়ে রয়েছে। এসবের তথ্য-প্রমাণ ঢাকার কাছে রয়েছে। ওইসব তথ্য-প্রমাণ ভারতের কাছে উপস্থাপনের পরও দিল্লি অসত্য বলে যাচ্ছে। ক‚টনীতিতে ঠিক শতভাগ অসত্যের প্রচলন সাধারণ সম্পর্ক রয়েছে এমন দুই দেশের মধ্যে চলে না। ভারত অযৌক্তিকভাবে একই মিথ্যা পুনঃপুন বলে তা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এদিকে ঢাকার অবস্থানও অনেকটা নমনীয়। ভারতের এমন মিথ্যাচারকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যালেঞ্জ করেনি। ভারতের যেকোনো মিথ্যাচারের পর ঢাকা চুপচাপ থাকার নীতি অবলম্বন করেছে। এতে গত দেড় বছরে কোনো লাভ না হলেও ঢাকা অবস্থান পরিবর্তন করেনি।
বিগত দেড় দশকে বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত প্রায় ৪৫ হাজার বাংলাদেশী হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরপর দেশটিতে আশ্রয় পেয়েছে। এদের মধ্যে হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল আদালতে দণ্ড পেয়েছেন। ভারত তাদের ফেরত পাঠানোর দাবি নাকচ করে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিবেশী দেশের সব অপরাধীকে আশ্রয় দিয়ে যদি বলা হয়, ভারত বাংলাদেশবিরোধী কাজে নিজের ভ‚খণ্ড ব্যবহার করতে দেয় না, এর চেয়ে রসিকতা আর কী হতে পারে। এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে বিকল্প পন্থায় হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। ভারতের এমন অন্যায্য আচরণ প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিষয়টি অবহিত করে অগ্রসর হতে হবে।



