জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো দেশজুড়ে গণহত্যা চালায়। শীর্ষ নেতারা ঘোষণা দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সশস্ত্র হামলার নির্দেশ দেন। রাজপথে প্রায় দুই হাজার প্রাণহানি ও ২০ হাজার মানুষ অঙ্গহানি-পঙ্গু হওয়াসহ গুরুতর আহত হয়েছেন। শেখ হাসিনার ক্ষমতার দেড় দশকে দল চালানো কোনোভাবে রাজনীতির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ফেলা যাবে না। এমনকি আওয়ামী লীগের জন্মের শুরু থেকে দলটিকে কোনোকালে গণতান্ত্রিক চরিত্রে দেখা যায়নি। যখনই বিশ্বাস করে জনগণ দলটিকে ক্ষমতা দিয়েছে; তারা জন-অধিকার চরমভাবে লুণ্ঠন করেছে। বর্ষা বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগের অতীত অপরাধের বিচারে জোরালো দাবি উঠেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিটি) আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে দলটির বিচারে মামলা করেছে তারা। আইসিটির প্রধান আইনজীবী জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। এর আগে আইসিটিতে সাক্ষ্য দিতে এসে বর্ষা বিপ্লবের সম্মুখসারির নেতা নাহিদ ইসলামসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার চেয়েছেন। জুলাইতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সশস্ত্র অবস্থায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে অবস্থান নেয়। কোথাও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আড়ালে কিংবা সরাসরি আন্দোলনকারী জনতার ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের এই আচরণ গণতন্ত্রের বিপরীত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মতো।
দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক মানসিকতা দেখা যায়নি। তারা মানুষের ভোটাধিকারসহ সবধরনের গণতান্ত্রিক অধিকার লুণ্ঠন করেছে। গুম-খুনসহ সবধরনের মানবাধিকার হরণ করেছে। এ কাজে তাদের সহযোগী ছিল ১৪ দলের শরিকরাও। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যত অপকর্ম করেছে, সব কাজে তারা সমর্থন দিয়ে গেছে। এনডিএমের পিটিশনে এ দলগুলোর বিরুদ্ধেও গণহত্যার অভিযোগ গঠনের আবেদন করা হয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে, ১৪ দলও সমান অপরাধে অপরাধী। তারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলে দলটির একার পক্ষে ভয়াবহ সব অপরাধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। জার্মানির নাৎসি পার্টিকে সব অপকর্মের দায় নিতে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছিল। শেষে জনগণের বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব অপরাধ সংঘটনে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। এখন পর্যন্ত এ দলের নাম ও আদর্শ নিয়ে কেউ রাজনীতিতে আসতে পারেন না।
আইসিটিকে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। দলটি এ যাবৎ জনগণের বিরুদ্ধে যত অপরাধ করেছে, সব বিবেচনায় আনতে হবে। সরকার পরিচালনায় শুরু থেকে দলটি সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। নিয়োগ পদোন্নতিতে দলীয় স্বার্থকে নিয়ম বানিয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট করেছে। সরকারি অফিসে ঘুষ-দুর্নীতি ও উন্নয়নের নামে লুটপাট করে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। বিচারের নামে যাতে দলটিকে বাঁচিয়ে দেয়া না হয়, আইসিটিকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া এমনভাবে অগ্রসর হতে হবে, যাতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কৃত অপরাধের জন্য উপযুক্ত শাস্তি পায়।