নিত্যপণ্যের বাজারে ফের অস্থিরতা, কারণ ছাড়াই বাড়ছে দাম

ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সরকারের হাতে আইন-কানুন যথেষ্টই আছে। মজুদদারি, মুনাফাখোরির বিরুদ্ধে নিয়মিত নজরদারি ও তদন্ত করতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সিন্ডিকেট যত বড়ই হোক, তাদের কাছে সরকার জিম্মি হতে পারে না।

নিত্যপণ্যের বাজারে মাঝে মধ্যে বিগত সরকারের আমলের মতো দাম বাড়ানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের দাম। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কোনোরকম পূর্ব ঘোষণা, এমনকি সরকারি অনুমোদন ছাড়া নির্দিষ্ট পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত গত দুই দিনে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বেড়ে যাওয়া। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীরা কোনোরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ভোজ্যতেলের দাম প্রতি কেজিতে ৯ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য তারা সরকারের অনুমোদনের তোয়াক্কা পর্যন্ত করেননি। বাণিজ্য উপদেষ্টা নিজে জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছেন। কিন্তু সরকার এখনো দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয়নি।

ব্যবসায়ীদের এ আচরণ শুধু অন্যায় নয়, রীতিমতো গণবিরোধী ও বেআইনি। তারা স্বৈরাচারী আমলের ১৫ বছরে যেভাবে সরকারের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে সুবিধা আদায় করেছেন, যখন যেভাবে ইচ্ছা পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়েছেন, এখনো ঠিক তেমনটিই চাইছেন। সরকারকে অসহায় করে একতরফা বেআইনি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে অবৈধ মুনাফা লুটছেন।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত তিন-চার দিনের মধ্যে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। গত শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ কিনতে হয় ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে।

এ দিকে কোনো ঘোষণা ছাড়া ভোক্তাপর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা। এ ক্ষেত্রে সরকারকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছেন আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী ব্যবসায়ীরা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। তারা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করছেন। মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

উল্লেখ করা যেতে পারে, পেঁয়াজের দরে মাসখানেক আগেও হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ৪০ টাকার মতো বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় উঠেছিল। বাধ্য হয়ে তখন সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। তত দিনে ব্যবসায়ীরা বিপুল মুনাফা পকেটে ভরেন। এবারো তারা সেই একই প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছেন।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রতি কেজি ১৭০-১৮০ টাকা হতে পারে। তবে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে দাম কেন বাড়ছে, তারা জানেন না। এমনকি শীতের মৌসুমে যখন বাজারে বিপুল শীতের সবজি এসেছে, তখন অনেক সবজিরই দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। শীতের কিছু সবজির দাম অযৌক্তিকভাবে বেশি হওয়াও ভোক্তাদের দুর্ভোগের কারণ। ভোক্তারা বলছেন, প্রশাসনের নজরদারির অভাব আছে।

এ বিষয়ে একটি কথাই বলার থাকে- ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সরকারের হাতে আইন-কানুন যথেষ্টই আছে। মজুদদারি, মুনাফাখোরির বিরুদ্ধে নিয়মিত নজরদারি ও তদন্ত করতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সিন্ডিকেট যত বড়ই হোক, তাদের কাছে সরকার জিম্মি হতে পারে না। আমরা মনে করি না, পতিত স্বৈরাচারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দুর্বলতা আছে। ভোক্তার অধিকার রক্ষা সরকারের একমাত্র দায়।