আবুল আসাদের ওপর হামলাকারী গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন

শেখ হাসিনা তার ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে কিছু লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করেছিল। এদের কাজ ছিল ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন ও নির্যাতন-নিষ্পেষণ চালানো। হেন কোনো কাজ নেই যা এই লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা করেনি। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ছিল তেমনি একটি লাঠিয়াল সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধের নাম ব্যবহার করে গড়ে তোলা এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা রীতিমতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত। বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকাকেন্দ্রিক এই সংগঠন নানা দুষ্কর্মে জড়িত ছিল। এই সংগঠনের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি। হাসিনার পতনের পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতার মতো মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারাও পালিয়েছে কিংবা গা ঢাকা দিয়েছিল। গত সোমবার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি এ এস এম আল সনেটকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে।

২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর এই সনেটসহ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের অন্যান্য নেতা দৈনিক সংগ্রাম অফিসে গিয়ে হামলা করে ভাঙচুর চালায় এবং পত্রিকাটির তৎকালীন সম্পাদক, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও লেখক আবুল আসাদকে অত্যন্ত জঘন্যভাবে লাঞ্ছিত করে। ওই সময় সংগ্রাম অফিস প্রাঙ্গণে পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা তো নেয়-ই নি; বরং আবুল আসাদকে থানায় ধরে নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছিল। সংবাদমাধ্যমের কোনো ভুল-ত্রুটি হলে তা সংশোধনের নানা পদ্ধতি এবং সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ রয়েছে; কিন্তু হাসিনার আমলে সেসবের কোনো বালাই ছিল না। যাকে পছন্দ হতো না তার ওপরই নেমে আসত হাসিনার পোষা বাহিনীর অত্যাচারের খড়গ। মুক্তিয্দ্ধু মঞ্চের সেই জঘন্য অপকর্ম দেখে সে দিন জাতি স্তম্ভিত হয়েছিল।

সনেটসহ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা শুধু সংগ্রাম অফিসে হামলা করেনি, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্র্থীদের শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করে ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) তৎকালীন ভিপি নুরুল হক নুরুসহ তার অনুসারীদের ওপর নারকীয় হামলা চালিয়েছিল। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে তার মতামত প্রদানের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে এবং ঢাবির আইন বিভাগে তার অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। এ ছাড়াও সনেটসহ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির বহু অভিযোগ রয়েছে।

শুধু সনেট নয়, সংগ্রাম অফিস ভাঙচুর ও আবুল আসাদকে লাঞ্ছিত করার সাথে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে বিচারহীনতার যে অপসংস্কৃতি চালু হয়েছিল তার অবসান হবে না।

একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে দেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। জুলাইয়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। গণহত্যার বিচার ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চসহ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা সেই সময়ের লাঠিয়াল সংগঠন ও তার নেতাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।