মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দীর্ঘ দিন ধরে আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। পরিবেশ দুর্গন্ধময় ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। কোনো সভ্য দেশে এটা অকল্পনীয়।
একটি জাতীয় দৈনিকের শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লার ভাগাড় তৈরি হয়েছে। তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দ্য বার্ডস রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক আসা যাওয়া করেন। চলাচল করেন হাজারও পথচারী। খাবারের উচ্ছিষ্ট, পলিথিন, নষ্ট সবজিসহ সব বর্জ্য ফেলা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে। দীর্ঘদিন ধরে জমতে জমতে সেগুলো পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই পরিবেশেই সবাইকে চলাচল করতে হচ্ছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যায় বৃষ্টি হলেই। নোংরা পানিসহ দুর্গন্ধ আরো তীব্র হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এ এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
কলেজশিক্ষার্থী মিতু বলেন, ‘প্রতিদিন নাক চেপে কলেজে আসা-যাওয়া করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাগাড় সরানোর দাবি জানিয়ে আসছি।’ আরেক শিক্ষার্থী উম্মে নাফিসা বলেন, ‘একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল অধিদফতরে, সেটি আটকা পড়ে আছে।’
সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান বলেন, ময়লার ভাগাড়ের কারণে তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পাঠদানসহ সব কার্যক্রম বিঘিœত হয়। পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে যায়। তা ছাড়া আমরা অনেক কথা বলেছি, অনেক প্রতিবাদ হয়েছে। আশা করছি, পরিবেশ দূষণের মাত্রা বিবেচনা করে অতি দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন বলেন, এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনের জন্য প্রকল্প আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আমরা প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। এ ছাড়া এখান থেকে ভাগাড় সরিয়ে কোথায় স্থানান্তর করা যায় সেই জায়গারও আমরা খোঁজ নিচ্ছি। আমরা চাই না, শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করুক। তা ছাড়া এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা ময়লার ভাগাড়ের গেটে একটি তালা লাগিয়ে সেটি বন্ধ করে দেয়। তারা জানায়, এখন থেকে সেখানে কোনো ময়লা ফেলা যাবে না।
ইউএনও স্বীকার করেছেন যে, এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এত দিনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। এটা ঘটেছে চায়েরনগরী হিসেবে পরিচিত শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল চা-গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচিত। এই শ্রীমঙ্গলে রয়েছে দেশের অন্যতম প্রাচীন চা-বাগান। সম্প্র্রতি চট্টগ্রামের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলেও চায়ের নিলাম হচ্ছে। এখানে একসাথে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লার ভাগাড় যতই দৃষ্টিকটু হোক, এটিই বাস্তবতা। স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণ দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কোনো সভ্য দেশে এটি অকল্পনীয়। শিশু শিক্ষার্থী এবং সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্য নিয়ে এমন উদাসীনতা বড় অপরাধ। কিন্তু প্রশাসনের সে দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় নেই। সমাজের মানুষও নির্বিকার বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে। মানুষ সোচ্চার হলে এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে না। আমরা এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের মনোযোগ আকর্ষণ করছি।



