ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য তিনি দীর্ঘ সাড়ে পনের বছর বিরোধী মত নিষ্ঠুরভাবে দমন করেন। এ জন্য হাজারো ভিন্নমতাবলম্বীকে গুম-খুন এবং জেলে পোড়েন। কিন্তু তার নিষ্ঠুরতা সীমা ছাড়িয়ে যায় চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার নির্দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। গণবিক্ষোভের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত সোমবার শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ পেটোয়া বাহিনী শেখ হাসিনার নির্দেশেই সুসংগঠিতভাবে আন্দোলনরত প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে। আরো ২০ হাজারের বেশি মানুষকে চিরতরে অন্ধ ও পঙ্গু করে দেয়। মানবতার বিরুদ্ধে এই অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) দায়ের হওয়া একটি মামলায় গত সোমবার শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। তারা উভয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ফেরত চায় ঢাকা। এ নিয়ে দিল্লিতে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন। রায়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রচারিত বিবৃতিতেও প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলা’য় অভিযুক্ত বা ফেরার আসামি ও বন্দীদের পরস্পরের কাছে হস্তান্তরের চুক্তি আছে ২০১৩ সাল থেকে।
বাংলাদেশ সরকার ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, দিল্লি যেন অবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি ভারতের জন্য অবশ্য পালনীয় বলেও দিল্লিকে মনে করিয়ে দিয়েছে ঢাকা।
এ দিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সংযত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। গত সোমবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঘোষিত রায়ের বিষয়টি অবগত আছে ভারত। নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ সুরক্ষায় ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সব অংশীজনের সাথে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকবে নয়াদিল্লি।
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মুখোমুখি। আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শান্তিকামী মানুষ হিসেবে আমরা আশা করি, নয়াদিল্লি প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে উল্লিখিত দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে প্রত্যর্পণ করবে। কারণ ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রত্যেক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা কার্যকর হওয়া বাঞ্ছনীয়। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতিও তাই। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত তা পরিপালন করবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।



