অর্থনীতির বর্তমান অবস্থায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে ‘সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়লেও দেশের অর্থনীতি স্বস্তিতে রয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বস্তিতে আছি। তবে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর তিনি সবিস্তারে দেননি। একই দিনে বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে চার দশমিক আট শতাংশ। বিশ্বব্যাংক যেসব চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিনিয়োগে ভাটা, কর্মসংস্থানে ঘাটতি, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক খাত, উচ্চ খেলাপি ঋণ ও দুর্বল রাজস্ব আদায়।
বিশ্বব্যাংক বলছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ব্যবসায় খরচ বেশি হওয়ায় দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ কম। অর্থনীতির জন্য মূলত এগুলোই চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাংক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমার কথা উল্লেখ করে বলেছে, এটি এখনো বেশি। মূল্যস্ফীতি এখন আট দশমিক তিন শতাংশের মতো, যা বিগত সরকারের শেষ সময়ে ছিল ১১ থেকে ১৪ শতাংশ। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য। সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে খানিকটা হলেও স্বস্তি পান, যদিও এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি।
বিশ্বব্যাংক অর্থনীতির যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বলেছে তা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। তবে বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব পর্যবেক্ষণ সবসময় যথার্থ হয় না। কোনো বিশেষ দেশের জন্য তাদের পরামর্শও যে সবসময় কল্যাণকর হয় এমনও নয়। এই সংস্থার পরামর্শেই বাংলাদেশের পাট খাত ধ্বংস হয়েছে। এমন ধারণা প্রচলিত আছে যে, এর পেছনে ভিন্ন দেশের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্য ছিল, যার বাস্তব নমুনা সবার জানা।
দেশে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা জরিপের পদ্ধতিগত বিষয় উল্লেখ করে এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা অর্থ উপদেষ্টার সাথে দ্বিমত না করেও বলতে চাই, প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা তার সরকারেরই দায়িত্ব।
দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ সাম্প্রতিক বাংলাদেশে ঘটেছে। কোভিড মহামারী থেকে শুরু করে গত ১৫ বছরের অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের কারণে এটি অবশ্যম্ভাবী ছিলই। কিন্তু সেই বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন এড়িয়ে যাচ্ছে তেমনি অন্তর্বর্তী সরকারও স্পষ্ট করছে না।
পূর্বসূরির ঘাড়ে দোষ চাপানোর গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসা ভালো। তবে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সাফল্য দেখাতে না পারলে তা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত হবে।
বিনিয়োগে ভাটা, কর্মসংস্থানে ঘাটতি, ব্যাংক খাতের নাজুক অবস্থা, বিপুল খেলাপি ঋণ এবং রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক না হওয়া চরম বাস্তবতা। রাজনীতিতে অনিশ্চয়তাও তেমনি। তাই অর্থনীতির সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা জরুরি। সেটি হলে, অর্থ উপদেষ্টার মতো দেশবাসীও স্বস্তি বোধ করবে। তা না হলে, জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। পতিত সরকারের দোসররা যেমন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর সুযোগ পাবে তেমনি দেশী-বিদেশী গণমাধ্যম বুঝে বা না বুঝে অপপ্রচারণা চালানোর সুযোগ নেবে। এমন দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে আছে।