সরকারি-বেসরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে দ্বৈতনীতি, আয়কর-বৈষম্য দূর করুন

৮২ শতাংশ সরকারি কর্মচারী আয়কর থেকে মুক্ত থাকবে- এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আশু পদক্ষেপ জরুরি।

সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গোটা দেশ কেঁপেছে। পরে সেটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়। এতে দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু তাতে বৈষম্য দূর হয়নি। সমাজের বহু ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য আছে। সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও যে বিরাট বৈষম্য জিইয়ে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে অনেকেই অসচেতন। এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য কখনো শোনা যায়নি।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর নির্ধারণে বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

‘৮২ শতাংশ সরকারি কর্মচারী আয়কর থেকে মুক্ত’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুধু মূল বেতনের ওপর কর দিতে হয়। আর করযোগ্য মূল বেতন পান মাত্র ১৮ দশমিক ২০ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা। ফলে সরকারের ৮২ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী আয়করের বাইরে রয়ে গেছেন। আবার বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া পুরুষ কর্মকর্তাকে চার বছর এবং নারী কর্মকর্তাকে ছয় বছর পর্যন্ত কর দিতে হয় না। অথচ বেসরকারি চাকরিজীবীদের কর্মজীবনের একেবারে শুরু থেকে শুধু মূল বেতন নয়, বেতন ও ভাতাসহ পাওয়া পুরো টাকার ওপর আয়কর দিতে হয়। এটি নিঃসন্দেহে সরকারের দ্বৈতনীতি। অর্থনীতিবিদরাও একে বৈষম্যমূলক বলে মনে করেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন সাবেক চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পত্রিকাকে বলেন, ন্যায্যতার প্রশ্নে সব নাগরিকের কর সমান হওয়া উচিত।

একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা অনুযায়ী, পুরুষ নাগরিকের সাড়ে তিন লাখ টাকা বার্ষিক আয় এবং নারীদের চার লাখ টাকা করমুক্ত। এই বৈষম্য সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে দ্বৈতনীতির কারণে সমাজে বৈষম্য আরো বাড়ছে। বৈষম্য দূর করতে সরকারি ও বেসরকারি সব চাকরিজীবীর কর একই হারে নির্ধারণ করা উচিত।

এই বৈষম্যের কারণে সরকার প্রতি বছর আনুমানিক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীরা নিজেদের সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত ও অভিজাত শ্রেণীর মানুষ ভাবছেন। সাধারণের কাছেও বিষয়টি এমনই। ফলে আমলা ও সাধারণের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্তি¡ক ব্যবধান যে আছে তা অস্বীকারের উপায় নেই।

লক্ষণীয়, এই বৈষম্যও অন্য কোনো সরকার নয়, সৃষ্টি করেছে খোদ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতিত আওয়ামী সরকার। হাসিনা নিছক ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার স্বার্থে সামরিক-অসামরিক সব শ্রেণীর আমলাদের খুশি রাখার কৌশল নেন। তাদের বেতন-ভাতা এক লাফে দ্বিগুণ করেই ক্ষান্ত হননি, ২০১৭ সালে এনবিআরের মাধ্যমে তাদের ভাতার ওপর কর মওকুফ করেন। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা অথবা এসব পদক্ষেপের সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নেননি। এর ফলে রাষ্ট্রের যে বিপুল আর্থিক ও অন্যবিধ ক্ষতি হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে সে হিসাব কখনো কেউ কষেনি।

কৌতূহল জাগানো ঘটনা হলো- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশ অনুযায়ী, এনবিআর আমলাদের ভাতার ওপর করারোপের উদ্যোগ নিয়েছিল। শেখ হাসিনা সেটিও নাকচ করে দেন।

৮২ শতাংশ সরকারি কর্মচারী আয়কর থেকে মুক্ত থাকবে- এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আশু পদক্ষেপ জরুরি।