ইলিশ বাংলাদেশের মূল অন্যতম অর্থকরী সম্পদ। কিন্তু ইলিশের আহরণ ও বিপণন নিয়ে সমস্যা আছে। বিদেশে রফতানি হলেও দেশের মানুষ এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারে না অতিরিক্ত দামের কারণে। জেলেরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় না। তাদের দারিদ্র্যের অবসান ঘটে না। এ কারণে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অবৈধভাবে ইলিশ শিকার করেন জেলেরা।
একটি সহযোগী দৈনিকের দুমকি (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, মা-ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষে বর্তমানে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। কিন্তু তার মধ্যেও অনেক স্থানে চলছে ইলিশ শিকারের মহোৎসব। পায়রা, পাতাবুনিয়া ও লোহালিয়া নদীতে দিন-রাত চলছে ইলিশ শিকার। প্রশাসনের জনবল স্বল্পতা আর যানবাহন সঙ্কটের কারণে তারা যথাযথভাবে নজরদারি করতে পারে না। প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও আছে।
উপজেলা প্রশাসন ট্রলারে করে অভিযান চালালেও জেলেরা টহল দলকে ফাঁকি দিয়ে ইলিশ শিকার করছে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান যথেষ্ট নয়। অবশ্য প্রশাসনের দাবি, তাদের অভিযান সফল। মৎস্য বিভাগের নিয়মিত অভিযানে এ পর্যন্ত চারটি নৌকা ও এক লাখ ৯০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল আটক হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
কিন্তু খবরে বলা হয়েছে, পায়রা, পাতাবুনিয়া ও লোহালিয়া নদীর অন্তত ১১টি পয়েন্টে জেলেরা দিন-রাত ইলিশ শিকার করছে। বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই (৪ অক্টোবর) জেলেরা নদীতে মা-ইলিশ শিকারে নামছে।
কিছু ব্যক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জেলেরা তাদের শিশু-কিশোর সন্তানদেরও সাথে নিয়ে ইলিশ শিকার করছে। জেলেরা যখন নদীতে নামে তখন তাদের নারী, শিশু-যুবারা নদীর তীরে রাতভর পাহারা দেয়। ট্রলার দেখলেই মোবাইলফোনে জেলেদের সতর্ক করে। তখন তারা দ্রুত নৌকা-জাল নিয়ে নদীর অপর তীরে পাশের উপজেলায় চলে যায় এবং বিভিন্ন এলাকার নিরাপদ ঝোপের আড়ালে, পাতাবন ও ছোট ছোট খালে ঢুকে পড়ে। অভিযানের ট্রলার চলে গেলে ফের জাল ফেলে।
এভাবে টনকে টন ইলিশ ধরা পড়লেও তা বাজারজাত হচ্ছে না। পাইকাররা মাছগুলো কিনে নিয়ে গোপনে মজুদ রাখছে। হাজিরহাট, লেবুখালী ফেরিঘাট, ভাঙ্গার মাথা, আঙ্গারিয়া বন্দর, পাতাবুনিয়ার হাট, জেলেপাড়া, উত্তর মুরাদিয়া ও জোয়ারগরবদিসহ ১১টি ঘাটে পাইকারদের গোপন আস্তানায় ইলিশ মজুদ রাখা হচ্ছে। দিনের বেলায় ইলিশের চিহ্নমাত্র দেখা না গেলেও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পরপরই নৌকা জাল গুটিয়ে সারা রাতের আহরিত ইলিশ বস্তায় ভর্তি করে জেলেরা সটকে পড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে অবৈধ ইলিশ ধরা ঠেকানো যাচ্ছে না। কিছু জেলে নির্দেশ মানলেও মৌসুমি জেলেরা কথা শুনছে না।
অভিযান সফল না হওয়ার কারণ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, থানা-পুলিশ, মৎস্য বিভাগের সমন্বয়হীনতা। সেইসাথে আছে নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের খাদ্যসাহায্য প্রদানে গাফিলতি। প্রতিশ্রুত খাদ্যসাহায্য না পেয়ে বাধ্য হয়ে জেলেরা ইলিশ ধরছে। অবিলম্বে খাদ্যসাহায্য না করলে তাদের ইলিশ ধরা থেকে বিরত রাখা কঠিন। সরকারের কাজের সমন্বয় প্রয়োজন। জনবল ও আর্থিক সঙ্কট দূর করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।