মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোতে দুর্নীতি, জড়িতদের কোনো ছাড় নয়

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত প্রবাসী আয়। অভিবাসীরা বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠান, যা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। সাধারণত, যেসব নাগরিক কাজের জন্য বিদেশে যান এবং নির্দিষ্ট সময় পর দেশে ফিরে আসেন, তাদের অভিবাসী বলে বিবেচনা করা হয়। সরকারি তথ্য মতে, বিশ্বের ১৭৬টি দেশে এক কোটি ৪৯ লাখের বেশি বাংলাদেশী আছেন। তবে বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশীর সংখ্যা এক কোটির কিছু বেশি হবে।

দুঃখের বিষয়, বিদেশী শ্রমবাজার নিয়ে দেশীয় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ভয়াবহ দুর্নীতিতে লিপ্ত। অভিবাসীরা বাধ্য হয়ে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে বিদেশে যেতে বাধ্য হন। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে নয়া দিগন্তসহ একাধিক সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে। এটি বাংলাদেশী শ্রমিকদের রিক্রুটমেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিগুলোর একটি। অন্তত ৬০টি ওভারসিজ রিক্রুটিং এজেন্সি সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায়, অবৈধ অর্থ লেনদেন ও অর্থ পাচারে জড়িত বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে এসেছে।

জনশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ দেশ। কিন্তু তাদের ৯৫ শতাংশ যান পাঁচটি দেশ- সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। লক্ষণীয়, জনশক্তি রফতানিতে আমরা নতুন বাজার যেমন তৈরি করতে পারিনি, তেমনি দুর্নীতির কারণে পুরনো বাজারও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনটি বড় শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর সংখ্যা দিন দিন কমছে। শুধু তাই নয়, মালয়েশিয়া, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, সেই সাথে সৌদি আরব ও কাতারের মতো দেশগুলোতে নিয়োগ কমে যাওয়া এবং মালয়েশিয়া, ওমানের পাশাপাশি বাহরাইনের শ্রমবাজারও বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে উঠেছে।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে। দেশটির শ্রমবাজারে জনশক্তি রফতানিতে সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায়ের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ছয়টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির নামে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ১৩টি ওভারসিজ কোম্পানির মালিকসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ১৩টি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক।

আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে পাঁচগুণ পর্যন্ত বাড়তি অর্থ আদায় করেছেন। মালয়েশিয়া গত বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। অনেক প্রার্থী নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিশ্চিত করার পরও শেষ মুহূর্তে এজেন্সিগুলো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে পারেনি। ফলে হাজার হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। ওই সময় থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। তবে সরকার জি-টু-জির মাধ্যমে এসব কর্মীকে মালয়েশিয়া পাঠাচ্ছে। সরকার উদ্যোগ নেয়ায় বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ফের চালুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে তিক্ত অভিজ্ঞতা নতুন নয়। দুষ্টচক্র তৈরির সুযোগ রেখে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ফের চালু হলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। এ জন্য দরকার দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেয়া। তা হলেই বিদেশে কর্মী পাঠানো নিয়ে জটিলতার অবসান হবে।