পতিত আওয়ামী লীগ সরকার জ্বালানি খাতকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। বিদ্যুৎ খাতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের নামে এবং গ্যাস খাতে বিপুল বাড়তি ব্যয়ে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে লুটপাটের সুযোগ তৈরি করা হয়। সেই অপকর্ম অবাধে চালাতে রাবার স্ট্যাম্প জাতীয় সংসদে দায়মুক্তি আইন পাস করা হয়।
জ্বালানি খাত থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণ অর্থ লুট করেছে তার সঠিক চিত্র এখনো জাতির সামনে আসেনি। তবে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির রিপোর্টে। ‘উন্নয়ন বয়ানের ব্যবচ্ছেদ’ শিরোনামের রিপোর্টে জানা যায়, শেখ হাসিনার সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় করা হয়েছে দুই হাজার ৮৩০ কোটি ডলার বা প্রায় তিন লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এ সময় শুধু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ‘ক্যাপাসিটি চার্জের’ নামে লুট করা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।
শ্বেতপত্রের তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে কমপক্ষে তিন বিলিয়ন ডলার সরাসরি লুট করা হয়েছে। প্রকাশ ও গোপন নানা চুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি খাত পুরোপুরি বিদেশনির্ভর করে ফেলা হয়। ফলে জ্বালানির অভাবে দেশের শিল্প খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। চাহিদামতো জ্বালানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আবাসিক খাতের ব্যবহারকারী জনগণও ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
দেশে জ্বালানির চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। মাত্র ছয় বছরে গ্যাসের চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে। এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ হচ্ছে মাত্র দুই হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি খাতে সরকারের মনোযোগ দেয়া জরুরি।
সরকার এর মধ্যে এলএনজি আমদানি থেকে সরে এসে গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে। ভোলায় ১৫টি কূপ খনন করে ১৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট প্রতিদিন উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মিলেছে। চলতি বছরের মধ্যেই আরো ৩৫টি এবং ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি গ্যাসকূপ খনন করা হবে। ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রের জন্য প্রসেস প্ল্যান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। সিলেটের রশিদপুর-১১ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন প্রকল্প চলমান আছে। গ্যাস অনুসন্ধানে সিসমিক সার্ভের প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প দরকারি। তবে এর সাথে দেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই বলে থাকেন, এলএনজি আমদানি করতে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা দেশে বিনিয়োগ করা হলে দুই বছরের মধ্যে জ্বালানি-স্বনির্ভরতা অর্জন সম্ভব। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে আমাদের ধারণা, জ্বালানি খাত পুরোপুরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকা দরকার। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র কিভাবে জাতিকে শোষণের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে তা আমরা আওয়ামী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেখেছি।
সরকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে সেটি হবে আগামী দিনে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সেরা উপায়। জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর দেশের প্রকৃত উন্নয়ন অনেকটা নির্ভরশীল।