জুলাই বিপ্লবী হাদির ওপর হামলা, জাতির জন্য হুঁশিয়ারি

এ অবস্থায় আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এ জন্য আওয়ামী খুনে বাহিনীকে খুঁজে বের করে নিষ্ক্রিয় করার বিকল্প নেই।

জুলাই যোদ্ধা, আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা হয়েছে। তাকে রাজধানীতে প্রকাশ্যে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির জীবন এখন বিপন্ন।

ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু গত নভেম্বর মাসে দেশী-বিদেশী ৩০টি নম্বর থেকে প্রাণনাশের হুমকিসহ নানা ধরনের হুমকি পাচ্ছিলেন হাদি। ১৪ নভেম্বর এ বিষয়ে ফেসবুক পোস্টও দিয়েছিলেন। পুলিশ বা প্রশাসন তখনই সচেতন হলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হয়তো তাকে এভাবে মৃত্যুমুখে পড়তে হতো না।

শুধু হাদির নিরাপত্তা হুমকিতে আছে এমন নয়। মূলত জুলাই বিপ্লবে যারাই নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের সবারই জীবন বিপন্ন। এ বিষয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী চক্র সক্রিয় রয়েছে। এমনকি তারা সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জুলাই যোদ্ধাদের নির্মূলের ঘোষণা পর্যন্ত দিয়েছে। তার পরও নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাশিত সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে। চট্টগ্রামে একজন প্রার্থীর মিছিলে গুলি করে একজনকে হত্যা করা হয় মাসখানেক আগে। সেই খুনিদের পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি এখনো।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্দেশ দিয়েছেন হাদির চিকিৎসা নিশ্চিত করার। বলেছেন, হাদির ওপর হামলা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার ওপর সুপরিকল্পিত আঘাত। রাজনৈতিক দলগুলো এটিকে নির্বাচনের পরিবেশ নস্যাতের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠানের তফসিল ঘোষণার পরদিনই হামলার ঘটনা ঘটে।

সবারই জানা, নির্বাচন নস্যাতের ঘোষণা আওয়ামী লীগ আগেই দিয়েছে। এই হামলা সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের অংশ হতে পারে।

অন্যতম জুলাই যোদ্ধা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, হাদির ওপর হামলা আসলে সব জুলাই যোদ্ধার ওপর হামলা এবং এর পেছনে সুপরিকল্পিত গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় সরকারের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও জাতির বিরুদ্ধে দলটির অপরাধের বিচার শুরু করা হয়নি। এই বিচার ঝুলিয়ে রাখলে ভবিষ্যতে একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটবে, তাতে সন্দেহ নেই।

একটি কথা সবারই মনে রাখা দরকার। স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই ছিল জুলাই বিপ্লবের মূলকথা। সেটি যদি নস্যাৎ হয়ে যায়, তাহলে শুধু গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাই হুমকিতে পড়বে না; বরং দেশের অস্তিত্বই হুমকিতে পড়বে।

তফসিল ঘোষণার পর এখন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলার যে উন্নয়ন দরকার, যে পরিবেশ দরকার তা এই মুহূর্তে দেশে নেই। আওয়ামী লীগের হুমকি মোকাবেলায় পুলিশি তৎপরতা যথেষ্ট নয়। নেয়া হয়নি সমন্বিত পরিকল্পনা। এমনকি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও কাক্সিক্ষত সফলতা পাওয়া যায়নি।

এ অবস্থায় আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এ জন্য আওয়ামী খুনে বাহিনীকে খুঁজে বের করে নিষ্ক্রিয় করার বিকল্প নেই।