লোকসান গুনছেন আলুচাষিরা, বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা

আমরা আশা করব, এ নিয়ে দেশের কৃষি বিভাগকে সরকার কাজে লাগাবে। একটি টেকসই বাজার ব্যবস্থাপনা তৈরির মাধ্যমে কৃষকের লোকসানের ঝুঁকি কমাতে তারা সাহায্য করবে। একইভাবে বাজারে এর প্রাপ্যতা সহজলভ্য করার জন্য সবসময় তৎপর থাকবে।

বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান। একটি অতি সহজলভ্য খাদ্য হওয়ায় একসময় সরকারের পক্ষ থেকে এই স্লোগান চালু করা হয়েছিল। মইন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় চাল ও আটার দাম বেড়ে গেলে বেশি করে আলু খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। আলু এমন একটি সবজি এর রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। সব রকম তরকারিতে আলু ব্যবহার করা যায়। এটি বাংলাদেশের মাটিতে সহজে ফলে। কার্যত আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশীদের খাদ্যতালিকায় আলু গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে; কিন্তু আলু উৎপাদন, বাজার ব্যবস্থাপনা এবং কৃষকদের নিয়ে সেভাবে ভাবা হয়নি।

এবার আলুচাষিরা বড় ধরনের লোকসানের শিকার হতে যাচ্ছেন। উৎপাদন যথেষ্ট না হওয়ায় বিগত মৌসুমের শেষের দিকে আলুর দাম বেড়ে যায়। গত শীতে সারা দেশে আলু দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। কৃষকরা তাই লাভের আশায় বেশি জমিতে আলু চাষ করেন। ৪ দশমিক ৬৭ লাখ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫ দশমিক ২৪ লাখ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। উৎপাদন হয় এক কোটি ৩০ লাখ টন আলু, যা দেশের চাহিদার চেয়ে ৪০ লাখ টন বেশি। ফলে এবার শীতের শুরুতে মূল্যবৃদ্ধির বদলে আলুর দাম কমে গেছে। এখন হিমাগারে মজুদ আছে ২০ লাখ টন। হিমাগারে আলুর দাম ৮-৯ টাকায় নেমেছে। এ অবস্থায় পাইকারি বাজারে আলুর দাম ১০-১৩ টাকায় নেমেছে। যেখানে আলুর প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ ১৭ টাকা। হিমাগারে রাখলে সংরক্ষণ ও ভাড়া বাবদ প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ টাকা। নতুন আলু বাজারে আসার আগে যখন দাম বেড়ে যাওয়ার কথা, তখন এর দাম হু-হু করে কমছে। যারা বাড়তি লাভের আশায় হিমাগারে আলু রেখেছিলেন তারা বড় লোকসানে পড়ছেন।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরকার ৫০ হাজার টন আলু কেনার ঘোষণা দিয়েছিল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সেই ঘোষণার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও আলু কেনেনি। হিমগারের ফটকে আলু প্রতি কেজি ২২ টাকা দর নির্ধারিত করে দিলেও তা কার্যকর হয়নি। এ কারণে কৃষকের একটি অংশ হতাশায় পড়ছেন। গতবার আশাবাদী হয়ে বেশি করে আলু চাষ করলেও এবার হতাশ হয়ে কৃষকরা আলু চাষ অনেক কমিয়ে দেবেন।

চালের পরে আলু বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যপণ্য। দুর্ভাগ্য হলো- উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা পুরোপুরি অনিশ্চিত। এ কারণে উৎপাদক ও ভোক্তা- উভয়ে মোটাদাগে ক্ষতিগ্রস্ত হন। একবার লোকসান দেন কৃষক, আরেকবার মাত্রাতিরিক্ত দাম দিয়ে তা কিনতে হয় ভোক্তাকে। অন্যান্য কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। এ থেকে আমাদের যেন মুক্তির কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকার যদি বাজার ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত তাহলে এ সঙ্কট থেকে উদ্ধার পাওয়া যেত। এবার ৪০ লাখ টন উদ্বৃত্ত আলু রফতানি করার চেষ্টা নিতে পারত সরকার অথবা এই আলুর বিকল্প কোনো ব্যবহার নিয়ে ভাবনা উপস্থাপন করতে পারত। তা হয়নি।

আমরা আশা করব, এ নিয়ে দেশের কৃষি বিভাগকে সরকার কাজে লাগাবে। একটি টেকসই বাজার ব্যবস্থাপনা তৈরির মাধ্যমে কৃষকের লোকসানের ঝুঁকি কমাতে তারা সাহায্য করবে। একইভাবে বাজারে এর প্রাপ্যতা সহজলভ্য করার জন্য সবসময় তৎপর থাকবে।