সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল, কার্যকর পদক্ষেপ নিন

সড়ক দুর্ঘটনারোধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। এমনকি গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানোর মতো কোনো উদ্যোগের সফলতাও লক্ষ করা যায় না।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে একসময় নদী ও রেলপথে ব্যাপক যাতায়াত থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা কম ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যাতায়াত ব্যবস্থায় পরিববর্তন এসেছে। এখন মানুষ সড়কপথেই বেশি চলাচল করে। ফলে এ পথে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। শুধু বাড়ছে বললে কম বলা হয়; বলতে হয়- সড়কে রীতিমতো মৃত্যুর মিছিল চলছে!

গত মঙ্গলবার যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একযুগে দেশে ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন। গড়ে প্রতিদিন সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন ২৭ জন এবং আহত হচ্ছেন ৩৮ জন।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অ-সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (ডিজিএইচএস) পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রতিদিন অন্তত ৬৬ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। এটি সব বয়সী মানুষের আঘাতজনিত মৃত্যুর শীর্ষ কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ লাইসেন্সবিহীন চালক, চালকদের ক্লান্তি নিয়ে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি প্রভৃতি। বিষয়গুলো সবার জানা থাকলেও এগুলো নিয়ে কাজের কাজ কিছুই হয় না। পরিবহনবিষয়ক প্রকাশিত এক তথ্য বলছে, গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহার করা বাসের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৭৩৩টি, মিনিবাস ২৮ হাজার ৫৬১টি, হিউম্যান হলার ১৭ হাজার ৩৭৪টি। এর মধ্যে ভাড়ার বিনিময়ে নির্দিষ্ট রুটে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত ২৩ হাজার ৬৬৫টি বাস, ১১ হাজার ৯০৫টি মিনিবাস ও ১৪ হাজার ৫১০টি হিউম্যান হলারের হালনাগাদ ফিটনেস সনদ নেই। অন্যদিকে, সারা দেশে চলাচল করা মেয়াদোত্তীর্ণ বাস ও ট্রাকের সংখ্যা ৭৫ সহস্রাধিক। এ ছাড়া বর্তমানে সড়কে আরেক সমস্যা হিসেবে আবিভর্ূত হয়েছে অটোরিকশা। সারা দেশে প্রায় দুই লাখ ১১ হাজার অটোরিকশার হালনাগাদ ফিটনেস সনদ নেই।

প্রশ্ন আসে, এসব বিষয় দেখাশোনা করা যে বিআরটিএর দায়িত্ব, তারা কি তা পালন করে? বিআরটিএর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। সড়কের এমন দুর্গতি দেখে মনে হয় না বিআরটিএ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান দেশে রয়েছে।

গাড়ির চালকদের ক্ষেত্রে গাড়ির মালিকদের উদাসীনতা রয়েছে। যার তার হাতে তারা গাড়ি তুলে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে তার লাইসেন্স আছে কি না তা-ও যাচাই করছে না। এই প্রবণতা বিপজ্জনক। গত সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘অশিক্ষিত চালকদের লাইসেন্স দেয়া দরকার। কারণ, তারা সিগন্যাল চেনে, গরু-ছাগল চেনে, মানুষ চেনে।’ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অনুমোদন, লাইসেন্সবিহীন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক নিয়োগ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনারোধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। এমনকি গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানোর মতো কোনো উদ্যোগের সফলতাও লক্ষ করা যায় না। যদিও মানুষ বর্তমান সরকারের কাছে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি নিয়ে ভালো কিছু আশা করেছিল। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে এ জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।