পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল। বলা চলে, তখন দেশের বেশির ভাগ মানুষের সংসার চালানো দায় হয়ে উঠেছিল। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি একটু কমে এলেও এখনো তা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে- এ কথা বলা যাবে না। এর কারণ, দেশের অর্থনীতি হাসিনা সরকার রীতিমতো ফোকলা করে দিয়ে গেছে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে অর্থনীতিকে উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার; কিন্তু বিগত সাড়ে ১৫ বছরের দুর্বৃত্তায়নে ভেঙে পড়া অর্থনীতিতে গতি আনতে সময় লাগছে, যার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। ফলে সাধারণের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসেনি।
সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজার এখনো খানিকটা চড়া। এতে সাধারণ মানুষের জীবনে পুরোপুরি স্বস্তি ফিরে আসেনি। তাদের নাভিশ্বাস রয়েই গেছে। গত সপ্তাহে প্রায় সবধরনের সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে যায়। সপ্তাহ শেষে সেই দাম কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে বাজার চড়া। বেশি দামে সবজি কিনতে গিয়ে গণমাধ্যমকে অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে কিছুটা বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজের দাম। অন্যান্য পণ্য আগের দামে অপরিবর্তিত থাকলেও তাও সাধারণের কাছে অসহনশীল।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দুই সপ্তাহ আগে বাজারে এক কেজি কাঁচামরিচের দাম ছিল ১৮০-২০০ টাকা। গত সপ্তাহে এর দাম কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে যায়। তাতে এক মরিচের দাম ৪০০ টাকায় উঠেছিল। সরবরাহ বাড়লে দাম আবার কমে আসে; কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। শুধু কাঁচামরিচ নয়, অন্যান্য সবজির দামও বেশ চড়া। বাজারে ১০০ টাকার নিচে কোনো ধরনের বেগুন কেনা যায় না। টমেটোর দাম ১২০ টাকা কেজি। অথচ দুই সপ্তাহ আগে মানভেদে এক কেজি বেগুন ৮০ টাকা ও টমেটো ১০০ টাকায় কেনা যেত। আসলে ৬০ টাকা কেজির নিচে তেমন কোনো সবজি কেনা যায় না। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৮০ টাকার উপরে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্য অনুসারে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ও দেশী পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে দুই টাকা বেড়ে ১৭২-১৮০ টাকা হয়েছে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৭০-৭৫ টাকা। বাজারে দু-তিন মাস ধরে মাছ, মুরগি ও চালের দাম চড়া। এর বাইরে গত এক মাসের মধ্যে আটা, মসুর ও মুগ ডালের দামও বেড়েছিল।
বাজার বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, আমাদের দেশের সরবরাহ ও বাজার-ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার সুযোগে ব্যবসায়ীরা এর ফায়দা তুলতে কোনো কসুর করেন না। তাই পণ্যের দাম আকাশ-পাতাল ওঠানামা বন্ধে এর স্থায়ী সমাধানে চাই টেকসই বাজার-ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ-ব্যবস্থায় মনোযোগী হওয়া। তবে তাৎক্ষণিক ফায়দা পেতে বাজারে কঠোর নজরদারি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তাহলেই সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।