নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চলছে ইলিশ পাচার, চড়া দামে পাতে জোটে না

বাংলাদেশ-ভারত মিলে একটি চক্র এতে যুক্ত। তাদের একটি অংশ হাসিনা পালানোর পর ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। চোরাইপথে ভারতে ইলিশ পাচার নিয়ে উচ্চতর তদন্ত হওয়া দরকার। জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দেশের ভেতরে থাকা চক্রের সদ্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মাধ্যমে চোরাইপথে ইলিশ পাচার বন্ধ করতে হবে। ইলিশ রফতানির ওপর সরকার সীমিত পরিসরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রফতানির সুযোগ থাকলে চোরাইপথে পাচার বন্ধ হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার লাভবান হবে।

মাছের রাজা ইলিশ এখন মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাত শ’ গ্রাম ওজনের একটি মাছের দাম দেশের বাজারে দুই হাজার টাকার উপরে। তিন ও চার শ’ গ্রাম ইলিশের দামও হাজার টাকা। এ দাম দিয়ে বাজার থেকে সাধারণ ভোক্তাদের ইলিশ কেনা অসম্ভব। দেশের বাজারে ভরা মৌসুমেও ইলিশের আকাল। সেই ইলিশ প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গে রফতানি হচ্ছে স্থানীয় বাজারের চেয়ে কম দামে। বিগত কয়েক বছর প্রতিবেশী দেশে ইলিশ রফতানি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলেও সরকার বন্ধ করেনি। এখন জানা যাচ্ছে, ভারত হয়ে অন্যান্য দেশে ইলিশ পাচার হয়ে যাচ্ছে। যেখানে ২০০৭ সাল থেকে বিদেশে ইলিশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।

দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে কিভাবে বিদেশে ইলিশ পাচার হচ্ছে একটি সহযোগী দৈনিকে এ বিষয়ে বিস্তারিক এক প্রতিবেদন ছেপেছে। রফতানির জন্য নির্ধারিত ইলিশ এলসি সাইজ বলা হয়। এগুলো সাত থেকে ৯ শ’ গ্রাম ওজনের। এলসি সাইজ পশ্চিমবঙ্গে রফতানি হচ্ছে এক হাজার ৫২৫ টাকায়। বাস্তবে যেগুলো স্থানীয় বাজারে দাম গড়ে দুই হাজার টাকা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সাথে মিলে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এ চক্রের কারণে পশ্চিমবঙ্গে কম দামে ইলিশ বিক্রি দেখানো হচ্ছে খাতা-কলমে। পশ্চিমবঙ্গের বাজারে কিছু কম দামে ইলিশ বিক্রিও হচ্ছে। বাস্তবে বাংলাদেশের বাজার থেকে কম দামে ইলিশ কেনা হচ্ছে এমন নয়। বাজার থেকে রফতানিকারক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট উচ্চ দামে ইলিশ কিনছে।

এই ইলিশের একটি অংশ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পেলেও সেখান থেকে পাচার হয়ে অন্যান্য দেশেও চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশী আছেন সেসব দেশে। ইউরোপ আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় সরেজমিন যা দেখা যায়। এসব দেশে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকার হোটেল ও সুপারশপে সবসময় ইলিশ পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, ওই সব দেশে সারা বছর সরবরাহ করা ইলিশের জোগানও বাংলাদেশ থেকে যায়। তবে তা ভায়া হয়ে ভারত থেকে। কিভাবে এটি সম্ভব হচ্ছে, এর উত্তর হচ্ছে চোরাকারবারি। পূজা উপলক্ষে সরকার এক হাজার ২০০ টন ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে রফতানির অনুমতি দেয়। বাস্তবে সারা বছর চোরাইপথে ভারতে ইলিশ যাচ্ছে। সেখান থেকে ভারতীয় রফতানিকারকরা ওই দেশগুলোতে পাঠাচ্ছেন। চোরাইপথে পাচারের কারণে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দুষ্প্রাপ্যতা আরো বাড়ছে। এ দিকে অবৈধপথে রফতানি হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। মাঝখান থেকে লাভের একটা অংশ তুলে নিচ্ছে ভারত।

প্রতিবেদনে এসেছে, বাংলাদেশ-ভারত মিলে একটি চক্র এতে যুক্ত। তাদের একটি অংশ হাসিনা পালানোর পর ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। চোরাইপথে ভারতে ইলিশ পাচার নিয়ে উচ্চতর তদন্ত হওয়া দরকার। জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দেশের ভেতরে থাকা চক্রের সদ্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মাধ্যমে চোরাইপথে ইলিশ পাচার বন্ধ করতে হবে। ইলিশ রফতানির ওপর সরকার সীমিত পরিসরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রফতানির সুযোগ থাকলে চোরাইপথে পাচার বন্ধ হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার লাভবান হবে।