বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন। গত সোমবার থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত টানা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এর আগে গত রোববার শিক্ষকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে, জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। সত্য বটে, শিক্ষকদের সমাবেশের কারণে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি হয়েছে। যানজটে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় নগরীর বড় অংশে। সে কারণেই পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জাতীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তারা সেটি উপেক্ষা করেন। লাঠিপেটার ঘটনা তারই ফলশ্রুতি। কিন্তু এটি মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো, শিক্ষকদের আন্দোলন যৌক্তিক কি না। সরকারকে এই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে এবং সহানুভূতির সাথে আলোচনার মাধ্যমে এর সুরাহা করতে হবে। শুধু শিক্ষক নয়, সমাজের কোনো একজন ব্যক্তির গায়ে হাততোলাও সভ্য রাষ্ট্র বা সরকারের কাজ হতে পারে না।
শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন মাত্র তিনটি দাবিতে। তাদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া পাওয়া, চিকিৎসা-ভাতা এক হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত করা, কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা। উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাদের চিকিৎসা-ভাতা ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। টাকার অঙ্ক যে খুব বেশি এমন নয়। বিশেষ করে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের তুলনায়। মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতাও সামান্য বলতে হবে। সত্য যে, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বেতনভাতায় পার্থক্য আছে। শিক্ষকদের আন্দোলনে সমর্থন দেয়া একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা এ পার্থক্যকে বৈষম্যমূলক বলছেন। দেখতে হবে, এটি আদৌ বৈষম্যের পর্যায়ে পড়ে কি না। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা সমান করে দিলেই সবার জন্য সুবিচার হবে কি না তাও বিবেচ্য। এ ক্ষেত্রে যুক্তি, আইন এবং প্রচলিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ জরুরি।
আমরা জানি, দেশের শিক্ষকরা যে বেতনভাতা পান তা সম্মানজনক নয়। তাদের সামাজিক মর্যাদাও যে খুব উঁচু এমনও নয়। কিন্তু তারা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করে দাবি আদায় কাম্য হতে পারে না। অথচ দেশে বহু বছর ধরে তেমনটাই চলে আসছে। আগের সরকারগুলো শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীলতা দেখাতে পারেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একই রকম আচরণ কেউ আশা করে না।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা শুরু করা দরকার। আন্দোলনের কারণে একজন শিক্ষার্থীরও ক্ষতি হলে তার দায় শুধু শিক্ষকদেরই নয়, সরকারেরও।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের সমর্থনকারীরা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাও জরুরি। ২০২৪-এর ৫ আগস্টের পর থেকে গত এক বছর ধরে শুধু শিক্ষক নয়, সমাজের যেকোনো মহলের আন্দোলন উসকে দিয়ে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। সেই চক্রান্তের ফাঁদে কেউ যেন পা না দেন। আমরা শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে চক্রান্তের অংশ বলি না; কিন্তু চক্রান্তকারীরা এটিকে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারে। সবারই সতর্ক থাকা উচিত।