ঢাকার সাত কলেজ ঘিরে নতুন সঙ্কট, দ্রুত টেকসই সমাধান করুন

প্রতিযোগিতামূলক সমকালীন বিশ্বে টিকে থাকতে হলে প্রতিটি দেশের জন্য চাই মানসম্পন্ন ও টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু আমরা স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও নিজেদের উপযোগী একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। এটি আমাদের জাতীয় জীবনের চরম ব্যর্থতা।

প্রাথমিক-মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা নিয়ে যেমন, তেমনি উচ্চশিক্ষা নিয়েও একই অবস্থা। এর উদাহরণ ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ। এগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম কিভাবে চলবে- গত প্রায় ৯ বছরেও তা ঠিক করা যায়নি। ফলে দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবং সহস্রাধিক শিক্ষক চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া ঢাকার এই সাতটি সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজের মধ্যে বর্তমানে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। বাকি পাঁচটি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকও পড়ানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির সময় থেকে কলেজগুলোতে শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঙ্কট দেখা দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত করার আগে অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় সাত কলেজের কার্যক্রম চলছে।

এসব কলেজ একীভ‚ত করে সরকার যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে, তার কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। এর মধ্যে গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করেছে। প্রস্তুাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। সাতটি কলেজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকেন্দ্র (অ্যাকাডেমিক ক্যাম্পাস)। একেক ক্যাম্পাসে আলাদা আলাদা বিষয়ে পড়ানো হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষকদের ভাষ্য, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে নন। তবে প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সঙ্কোচন এবং কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে। এমনকি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদও বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়বে। প্রস্তাবিত কাঠামোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে গত বুধবার একযোগে নিজ নিজ কলেজে মানববন্ধন করেন সাত কলেজের শিক্ষকরা।

অন্য দিকে, এসব কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিক স্তর অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এ দিকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আগে থেকে আন্দোলন করে আসছেন কলেজগুলোর স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, এখনকার মতো কাঠামো অনুযায়ী কলেজগুলো আগামী কয়েক বছর চলবে।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষাজীবনের নানাবিধ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের মধ্যে যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে তা বিস্ফোরণোন্মুখ হওয়ার আগেই সরকারকে দ্রুত গ্রহণযোগ্য সমাধানে যেতে হবে।