জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সারাবিশ্বে ক্রমবর্ধমানভাবে দৃশ্যমান। যেসব জায়গায় সচরাচর বৃষ্টি হতো না, সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাতে বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে। আবার যেখানে ছিল নিয়মিত বৃষ্টিপাত সেখানে দেখা দিচ্ছে অনাবৃষ্টি ও খরা। তাপমাত্রার ওঠানামার তারতম্যও বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে শীতকাল, কোথাও গ্রীষ্মকাল। এ ক্ষেত্রে ধনী দরিদ্র কোনো বাছবিচার নেই। সব জায়গায় এক ধরনের চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার আগমন ঘটছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় জলবায়ুর এ মাত্রাতিরিক্ত পরিবর্তন। ফলে ধনীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে দ্রুত খাপখাওয়াতে পারলেও দরিদ্ররা তা না পেরে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে ধনীরা মূলত দায়ী। উন্নয়নের লোভে গড়ে তুলেছেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। যে দেশ যত ধনী, সে দেশের কার্বন নিঃসরণ তত বেশি। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে যে বৈশ্বিক অভিঘাত তৈরি করছে তা বেশি পড়ছে দরিদ্র দেশগুলোতে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল রয়েছে যেখানে, সেখানে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে। বলা যায়, ধনীদের লোভের পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের মতো দেশগুলোর। এ নিয়ে সারা বিশ্বে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। যদিও ধনী দেশগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে দরিদ্র দেশগুলো সেভাবে প্রভাব রাখার মতো কিছু করতে পারছে না। সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ আমেরিকা জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে গেছে। দেশটি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কোনো দায় পরিশোধ করতে চায় না। এভাবে প্রায় সব ধনী দেশ এই দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) রাজধানীতে জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি নিয়ে দুই দিনব্যাপী সমাবেশের আয়োজন করে। তাতে সরকারের উপেদষ্টা, পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং দেশী-বিদেশী জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অংশ নিয়েছেন। তারা মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দাবি দাওয়া তুলে ধরছেন। বৈশ্বিক উত্তর বা উত্তর মেরুর ধনী দেশগুলোর দায়িত্বহীনতায় বৈশ্বিক দক্ষিণের কোটি কোটি মানুষ ভুক্তভোগী। তাদের জীবন-জীবিকা ঘরবাড়ি এমনকি বেঁচে থাকা সঙ্কটে পড়েছে। সমুদ্রের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল ডুবে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এর প্রভাব আরো গভীর। সমুদ্রের নোনাপানি ঢুকে পড়ায় জীবিকা বিপন্ন হয়েছে এবং হচ্ছে। মৎস্য চাষ, ফসল উৎপাদন এবং সুপেয় পানির সঙ্কটে পড়েছেন তারা। একই ধরনের কঠিন পরিস্থিতি বৈশ্বিক দক্ষিণের বহু দেশে পড়েছে।
জলবায়ু সম্মেলনে দুটো দাবি বরাবর উত্থাপন করা হয়। ধনী দেশগুলোকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। অন্যটি দরিদ্র ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়া। দুই ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলো দায়িত্বহীন আচরণ করছে। ইতোমধ্যে দরিদ্র দেশগুলো যে পরিমাণ ক্ষতির শিকার হয়েছে; তার খুব সামান্য অংশ ধনী দেশগুলো ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে। যতটুকু ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে, তা-ও সময়মতো ছাড় দেয় না। ফলে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য জলবায়ু খাপখাওয়ানোর যে প্রকল্প, সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। অন্য দিকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ধনী দেশগুলোর দেয়া আগের প্রতিশ্রুতিও তারা পালন করেনি। নতুন করে খুব কম দেশ কার্বন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ অবস্থায় ধনী দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াতে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।



