মুখ থুবড়ে আছে রেল, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা দরকার

দেশে লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প হয়েছে; কিন্তু রেল শিল্পের সেই তুলনায় সামান্য বিনিয়োগ হয়নি। যা দিয়ে অনায়াসে কিছু ইঞ্জিন-বগি কেনা যেত। এ জন্য চাই রেলের ব্যবস্থাপনা ত্রুটি কাটিয়ে ওঠা। তবে সবার আগে দরকার দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সৎ ও যোগ্যদের সামনে আনা।

নিরাপদ ও আনন্দদায়ক ভ্রমণে রেলের আকর্ষণ সারা বিশ্বে যখন বাড়ছে; তখন এদেশে বিপরীত চিত্র লক্ষণীয়। শুধু তাই নয়, রেলে পণ্য পরিবহন খরচও কম। অথচ আমাদের রেল অবহেলার শিকার হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এর জন্য মূলত দায়ী পুরনো ইঞ্জিন ও অপ্রতুল সংখ্যা এবং কোচ বা বগির নাজুক অবস্থা। এর ওপর গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে আছে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা। ফলে ক্রমে অস্তিত্বসঙ্কটে পড়ছে রেল। সঙ্গত কারণে এ খাত বাঁচাতে সরকারকে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন উভয় ক্ষেত্রে রেলের কার্যকারিতা কমেছে। ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় যাত্রা বিলম্ব ও সময়সূচির বিপর্যয় ঘটছে। এর প্রভাবে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন কমছে। যাত্রীরা বিকল্প পথ বেছে নিতে পারলেও কনটেইনার পরিবহনে দেখা দিচ্ছে জটিলতা। পরিণামে বন্দর ও টার্মিনালে জমে যাচ্ছে কনটেইনার। এতে আমদানি-রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি তথ্যমতে, রেলওয়ের বহরে এখন ৩০৬টি পুরনো লোকোমোটিভ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৪টি মিটারগেজ, যার ১২৪টির আয়ুষ্কাল পার হয়ে গেছে। প্রায়ই এগুলো বিকল হয়ে পড়ে। প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন যেখানে নেই, সেখানে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নতুন করে ইঞ্জিন জোগান দেয়া যায় না। এ কারণে যাত্রা বিলম্ব হয়, কখনো বা বাতিল করতে হয়।

লোকোমোটিভ ও কোচ সঙ্কটে ইতোমধ্যে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বে বন্ধ রয়েছে ৭০টি ট্রেন। চলমান লাইনেও প্রতিদিন একাধিক যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে হচ্ছে। অবস্থা এত খারাপ যে, শুধু গত জুনে রেলের পূর্বাঞ্চলে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও মালবাহী মিলিয়ে ৪৩৫টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে হয়। ইঞ্জিনের অভাবে এক হাজারের বেশি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে আছে। এতে রফতানিকারকরা পড়েছেন বিপাকে। অথচ মালামাল পরিবহন রেলের জন্য বেশ লাভজনক। দেখা গেছে, ২৩-২৪ অর্থবছরে মালামাল পরিবহন করে ১৫৩ কোটি টাকা আয় করেছে রেল। পরের অর্থবছরে আয় ৯৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। যদিও সামান্য বিনিয়োগ করে রেল এই ব্যবসায় করতে পারে; কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনো আগ্রহ নেই।

হাসিনার আমলে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মে রেল ‘কালো বিড়াল’ তকমা পেয়েছিল। দলীয় লোকেরা দুর্নীতিবাজ আমলাদের সাথে মিলে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে রেল থেকে। টিকিট কালোবাজারি রীতিমতো প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছিল। এমনকি এ বিভাগে লোক নিয়োগেও হয়েছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। তবে আসল কাজ, রেলকে বাঁচাতে নেয়া হয়নি উদ্যোগ। এতে রেল এখন অনেকটাই নির্জীব হয়ে পড়েছে।

বাস্তবে মানুষ রেলভ্রমণে আগ্রহী। পর্যটন বিকাশেও রেল কাজে লাগানো যায়। কক্সবাজারের মতো বৃহৎ বিনোদন এলাকায় মসৃণ রেলসেবা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এ জন্য বিলম্ব হওয়ার বিড়ম্বনা দূর করতে সময়সূচি মেনে চলতে হবে। এটি করতে হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইঞ্জিন ও বগি দরকার।

দেশে লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প হয়েছে; কিন্তু রেল শিল্পের সেই তুলনায় সামান্য বিনিয়োগ হয়নি। যা দিয়ে অনায়াসে কিছু ইঞ্জিন-বগি কেনা যেত। এ জন্য চাই রেলের ব্যবস্থাপনা ত্রুটি কাটিয়ে ওঠা। তবে সবার আগে দরকার দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সৎ ও যোগ্যদের সামনে আনা।