বরিশালে স্কুল ফিডিং কর্মসূচিতে অবহেলা, জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

সরকারের ভালো উদ্যোগগুলোর অন্যতম একটি হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ, পুষ্টি-সঙ্কট দূর করা এবং তাদের স্কুলে উপস্থিতি বাড়াতে খাদ্য কর্মসূচি বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু এমন কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার খবর মিলছে। ফলে এ কর্মসূচির সফলতা নিয়েও সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে।

একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে বরিশালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খাদ্য কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য কর্মসূচির আওতায় নির্ধারিত স্কুলে রুটি, বিস্কুট, ডিম, কলা ও দুধ দেয়ার নির্দেশনা আছে। চারটি উপাদানের মধ্যে দু’টি প্রতিদিন দেয়ার কথা। কিন্তু বরিশাল বিভাগের আট উপজেলায় দুধ ও বিস্কুট এখনো দেয়া হয়নি। এসব উপজেলার মধ্যে আছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, গৌরনদী, হিজলা, মুলাদী, উজিরপুর এবং ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া ও নলছিটি। উল্লিখিত উপজেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। সোমবার বনরুটি ও দুধ, ফর্টিফায়েড বিস্কুট ও কলা দেয়ার নির্দেশনা আছে। এ দু’দিন শুধু রুটি ও কলা দেয়া হয়। সরবরাহ করা রুটি ও কলার মান ঠিক থাকে না। বিষ্ঠাযুক্ত ডিমও দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিযোগ, কাঁচা অথবা অতিরিক্ত পেকে যাওয়া কলা দেয়া হয়, যা খাওয়ার উপযোগী নয়।

বরিশাল বিভাগের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে চট্টগ্রামভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইল্যান্ড ট্রেডিং। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি আবার স্থানীয়ভাবে একাধিক এজেন্ট ও সাব-এজেন্ট নিযুক্ত করে উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খাদ্য সরবরাহ করছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মূল প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত খাদ্য কর্মসূচির অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা শুধু স্কুলের খাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে নয়, নানা কর্মকাণ্ডে এমন সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন- রাস্তাঘাট মেরামত ও কালভার্ট নির্মাণে এমন সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরকারি কাজ বাগিয়ে নিয়ে অন্যের কাছে তা বিক্রি করে দেয়ার নজির আছে ভূরি ভ‚রি। ফলে সুচারুরূপে কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

বরিশালে শিক্ষার্থীদের পচা কলা আর নষ্ট রুটি দেয়ার যে অভিযোগ এসেছে তা শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বয়ে আনবে। এর মাধ্যমে শিশুদের পুষ্টিজোগান দূরের কথা উল্টো তাদের পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে অভিভাবকরা তাদের শিশুসন্তানদের স্কুলে পাঠাতে শঙ্কায় থাকবেন। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর যে উদ্দেশ্য তা ব্যাহত হবে।

দেশে নানা কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এমন অবস্থায় তাদের মধ্যে খাদ্য কর্মসূচি শিক্ষার্থী বৃদ্ধির যেমন সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি পুষ্টি ঘাটতি পূরণে একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এমন কর্মসূচি যেকোনো মূল্যে সফল করতে হবে। এই কর্মসূচিতে যেকোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি বরদাশত করার কোনো সুযোগ নেই। যেসব দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খাদ্য কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অপচেষ্টা করছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।