৭৫ শতাংশ গাড়িচালক ক্ষীণদৃষ্টি, স্বাস্থ্যে নজর দেয়া জরুরি

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের জন্য আমাদের যেমন সড়ক ও যানবাহনের অবস্থা ভালো রাখতে হবে, তেমনি চালকদেরও শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো রাখা জরুরি।

নিরাপদ সড়ক সবার প্রত্যাশা। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ভুক্তভোগীদের কান্না। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে যানবাহনের চালক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চালক সুস্থ ও সবল থাকলে তার পক্ষে সুষ্ঠুভাবে গাড়ি চালানো সম্ভব। এতে ঝুঁকিও কমে। কিন্তু গাড়ির ‘ফিটনেস’ দেখার ব্যবস্থা থাকলেও চালকদের ফিটনেসের দিকে কারো নজর নেই। ফলে গাড়ির চালকরা নানাবিধ স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়েই প্রতিনিয়ত গাড়ি চালান।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সেবা সংস্থা ‘ভিশন ¯িপ্রং বাংলাদেশ’ পরিচালিত গাড়িচালকদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষায় দেখা গেছে, ‘রাজধানী ঢাকার গাড়িচালকদের ৭৫ শতাংশেরই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। তাদের চশমা ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। ৮০ শতাংশ চালক প্রথমবার চশমা নিয়েছেন। ৭৫ শতাংশ চালক জানেনই না তাদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল। সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালে ৮০ ও মহাখালী বাসটার্মিনালে চালকদের ৭৯ শতাংশের চোখে ত্রুটি রয়েছে।’ গাড়িচালকদের দৃষ্টিশক্তির এই পরীক্ষা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক হলেও এই চিত্র যে মোটামুটি সারা দেশেরই তা সহজে অনুমেয়।

গাড়িচালকদের চোখে কম দেখা খুবই বিপজ্জনক। সামনে হঠাৎ কোনো মানুষ, প্রাণী বা যানবাহন এলে চালক তা সময়মতো বুঝতে না পারায় দুর্ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া আলো কমে গেলে বা রাতে গাড়ি চালানোর সময় ঝাপসা আলোয় বিভ্রান্তি দেখা দেয়, ফলে চালক গতির নিয়ন্ত্রণ হারান। অনেক ক্ষেত্রে ছোট অক্ষরে লেখা সাইনবোর্ড, রাস্তার মোড়ের বাঁক বা ট্রাফিক লাইটের সঙ্কেতও ঠিকমতো দেখা যায় না, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতিদিন যেসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তার বড় অংশই ঘটে চালকের চোখের সমস্যার কারণে।

শুধু চোখের সমস্যা নয়, চালকরা আরো কিছু সমস্যা নিয়ে গড়ি চালান; যেগুলোর প্রতি খুব কমই নজর দেয়া হয়। বাংলাদেশের চালকদের একটি বড় অংশ দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালান। এই সময়টা কখনো ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত হয় বলে জানা যায়। এটি একটি বিপজ্জনক প্রবণতা। একজন চালক যখন একটানা লম্বা সময় ধরে গাড়ি চালান। এতে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ পড়ে। গাড়ি চালানোয় মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই চালকদের গাড়ি চালানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা দরকার। আর এ জন্য চালক ও গাড়ির মালিক- উভয়কেই সচেতন থাকতে হবে।

গাড়ি চালানোর আগে চালকের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক আছে কি-না তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের জন্য আমাদের যেমন সড়ক ও যানবাহনের অবস্থা ভালো রাখতে হবে, তেমনি চালকদেরও শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো রাখা জরুরি। আর এ জন্য গাড়ির মালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, চালকদের যেন কোনোভাবেই শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে গাড়ি চালাতে না হয়- সেটি যেমন গাড়ির মালিকপক্ষ নিশ্চিত করবে, তেমনি চালকরাও যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতে এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। আর এভাবে দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ সড়ক গড়া সম্ভব হতে পারে।