ধর্ম-বর্ণ ও আদর্শের ভিত্তিতে মানুষের সমাজ বৈচিত্র্যময়। একটি উন্নত সমাজের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভিন্নতাকে স্বীকৃতি দিয়ে সবার সহাবস্থান নিশ্চিত করা। অপবাদ দিয়ে কাউকে অপরায়ন করা হলে ওই সমাজে অস্থিরতা দেখা দেয়। ঘৃণা-বিদ্বেষের মাত্রা বাড়তে থাকে। হাসিনার শাসনে যা আমরা দেখেছি। ৫ আগস্টের পর মুক্ত উদার সহনশীল একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার আশা জাগ্রত হলেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি বাউলদের ওপর হামলা এমন একটি ঘটনা। এ ধরনের অসহিষ্ণুতা কোনোভাবে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। তবে বাংলাদেশের সমাজে অপরাধের প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সুশীল সমাজের কাছ থেকে সমান প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় না। একটি কাক্সিক্ষত আদর্শবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠায় সুশীল সমাজের এই আচরণ বাধা হিসেবে থেকে যাবে।
মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলা হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের চড়-থাপ্পড়, লাথি ও লাঠিপেটা করা হচ্ছে। একজনকে দেখা গেল, পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে হামলা থেকে বাঁচতে চাইছেন। সেখানেও তার ওপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে। ওই হামলায় ১৫ বাউল আহত হয়েছেন। বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তি দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন ঘিরে হামলার ঘটনা ঘটে। ‘সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাউলদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যারা এসেছিলেন, তারা সর্বস্তরের আলেম-ওলামার ব্যানারে আসা লোকদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম। এভাবে একদল মানুষকে দুর্বল অবস্থায় আক্রমণ করা শুধু ইসলাম নয়; বরং কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। আবেগপ্রবণ একটি গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। বাউলরা যদি কোনো অন্যায় করে থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারত। হাসিনা পালানোর পর এখন বিচার পাওয়ার উন্মুক্ত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাউলদের ওপর হামলার পেছনে কারো ইন্ধন থাকলে প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। সাথে সাথে জননিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ‘তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে বহু হামলার ঘটনা প্রচার হচ্ছে। এসব ঘটনায় উপযুক্ত বিচার চাওয়ার বদলে বাংলাদেশে ধর্মের নামে উগ্রতা বেড়ে যাওয়ার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ধরনের হামলার ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকলেও তা তৌহিদি জনতার কর্ম হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের মিডিয়া ও সুশীল সমাজ অনেকটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার মতো খবর প্রকাশে উৎসাহী, তদন্ত কিংবা বিচারে নয়।
শেখ হাসিনা সবসময় নিজের লাভের জন্য বাংলদেশের মুসলমানদের উগ্র অসহিষ্ণু ও সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রিত করতেন। এতে বিরোধীদের দমন করা সহজ হতো। এখনো একটি অশুভ চক্র সুযোগ পেলে হাসিনার বয়ান প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালায়। আর একটি গোষ্ঠী সেই ফাঁদে পা দিচ্ছে। পাশাপাশি স্বার্থান্বেষী মহল এমন ঘটনা ঘটিয়ে অন্যদের ওপর দোষ চাপাতে তৎপর। আলেম-ওলামা, মাদরাসাছাত্ররা এ নিয়ে সচেতনতার পরিচয় দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে তাদের স্মরণে রাখতে হবে, কোনোভাবে যেন তারা কারো ক্রীড়নক না হন। অন্য দিকে প্রশাসনকে ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ও উসকানিদাতাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।



