বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা জাগছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক- উভয় বিষয়ে দুই দেশের বহু ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করার সুযোগ আছে। যেসব পণ্য প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দেশটি থেকে সস্তায় পাবো, সেটি আমরা সেখান থেকে কিনব, তারাও আমাদের কাছ থেকে কিনবে। একই সাথে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে তারা আমাদের সমর্থন করে শক্তি বাড়াবে, আমরাও তা করব। পাকিস্তান ২২ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশ। তারা আমাদের পাশে দাঁড়াতে চায়। দেশ দু’টির মধ্যে বাস্তবতার ভিত্তিতে সম্পর্ক রাখার যে প্রয়োজনীয়তা তাকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে এতদিন উভয় দেশ বঞ্চিত হয়েছে। আশা করা যায়, দু’টি দেশ পরস্পরের স্বার্থে সম্পর্ক গভীর করার বিষয়টি উপলব্ধি করবে।
পাকিস্তানের সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্নপর্যায়ে বৈঠক করছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, পাকিস্তানি বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে তিনি ব্যাপক আলোচনা করেছেন। শিল্প খাতের মধ্যবর্তী পণ্য উভয় দেশ যৌথভাবে উৎপাদন করতে পারে। খাদ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদন এবং বিনিময়ে পরস্পরের সহায়তা ও ফল আমদানি-রফতানি নিয়ে উভয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আনারস রফতানির বিষয়ে কথা হয়েছে এবং এক কোটি কেজি চা শুল্ক ও কোটামুক্ত রফতানির সুযোগ চাওয়া হয়েছে। হাইড্রোজেন-পারঅক্সাইডের ওপর এন্টি ডাম্পিং ট্যাক্স প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে। চামড়া ও চিনিশিল্পে পাকিস্তান এগিয়ে থাকায় এ শিল্পে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
দুইপক্ষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ধারণা দেয়া হয়েছে, কী কী পণ্য পাকিস্তানে রফতানি করা যায়। একইভাবে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলও ধারণা দিয়েছে, তারা কোন কোন পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করতে পারে। জুলাই বিপ্লবের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছে। দুই দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে উভয় দেশ সফর করেছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ সম্পর্কের ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানের রফতানি ১৯ শতাংশ বেড়েছে। একইভাবে পাকিস্তানে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। তবে উভয় দেশ মিলে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য করে। আবার এর মধ্যে পাকিস্তানের রফতানির পরমাণ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। এই বাণিজ্য অনায়াসে বহুগুণে বাড়িয়ে নেয়া যায়। উভয় দেশ সে জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন গঠনের।
একাত্তরে বিভক্ত হলেও দেশ দু’টির মধ্যে কিছু স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় আলাদা হয়নি। বিগত সরকার তার পুরো সময়ে এ সম্পর্ক অগ্রাহ্য করে পাকিস্তানের সাথে প্রায় সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখে। এবার দুই দেশের মধ্যে ভিসাবিহীন যোগাযোগের সূচনা হতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সরকারি কর্মকর্তারা এমন সুযোগ পাবেন।
কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে আবেগের প্রাধান্য থাকতে পারে না। এ সম্পর্ক পুরোপুরি প্রয়োজনের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে আমাদের নিজেদের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। এ বাস্তবতা যেন কোনোভাবে অগ্রাহ্য না করা হয়।