পাউবোর ১৮২ একর জমি বেদখল, সরকারকে ভূমি উদ্ধার করতে হবে

আমাদের দেশে সহজে সরকারি জায়গা দখল হয়ে যায়। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা এমনটি করে থাকে। এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্তৃপক্ষকে সময়মতো সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় না। এতে করে দেশজুড়ে সরকারি সম্পত্তির বড় একটি অংশ দখলে চলে গেছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের কাছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের বড় একটি অংশ দখল হয়ে গেছে।

সাগর ও শঙ্খ নদবেষ্টিত আনোয়ারা উপজেলায় বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৯৬০ ও ১৯৯০ সালে অধিগ্রহণ করে পাউবো। এর মধ্যে বদলপুরা, বন্দর, রাজাদিয়া, গোবাদিয়া, তুলাতলী, ফুলতলী, পরুয়াপাড়া ও গহিরা মৌজার বারোআউলিয়া পর্যন্ত পাউবোর নামে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। এই জমির ১৮২ দশমিক ২৫ একর অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। কটেজ, দোকান, রেস্টুরেন্ট, ডেইরি ফার্ম, মাছের ঘের, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ ২৭৬টি স্থাপনা তৈরি করেছে দখলদাররা। এসব ভ‚মির বাজার দরে মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

বদলপুরা থেকে বারোআউলিয়া পর্যন্ত বেড়িবাঁধের দুই পাশে গড়ে উঠেছে আধাপাকা ও টিনশেডের শতাধিক দোকানঘর। বদলপুরা মেরিন একাডেমি, শাহদাতনগর জালিয়াঘাটা, রাজাদিয়া বাজার, পারকি বাজার ও সৈকত, উত্তর পরুয়াপাড়া, খোদ্দ গহিরা, দোভাষীর হাট, উঠান মাঝির ঘাট ও বাইগ্যার ঘাটে দোকানের দখলদারিত্ব বেশি। বেড়িবাঁধের প্রায় ১২ কিলোমিটার জুড়ে দুই পাশের পাউবোর জায়গা দখল হয়েছে। বসতবাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সামনে পাউবোর ফাঁকা জায়গায় ভরাট করে আয়ত্তে নিয়েছে। খলিয়াঘাটা থেকে রাজাদিয়া বাজার পর্যন্ত বাঁধের পাশে শতাধিক বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে। বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকরা পাউবোর জলাশয়ে মাটি ফেলে অবাধে দখলে নিয়েছেন। কেউ কেউ সরকারি জমির ওপর দিয়ে নিজেদের বাড়ির পথও করেছেন। শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি দখলবাজিতে জড়িত। তবে পাউবোর কর্মকর্তারা দখলদারদের নামের তালিকা করতে পারেননি। অবৈধ দখলের ঘটনা এখনো প্রতিদিন ঘটছে।

দখলস্বত্বে মালিকদের কাছ থেকে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে অন্যরা ব্যবসায় করছেন। রাঙ্গাদিয়া বাজারে এ ধরনের অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে। ভাড়াটেরাও দখলদারদের নাম বলতে নারাজ। রাঙ্গাদিয়া বাজারের পাশে বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছে অর্ধশতাধিক পরিবার। তাদের কেউ বাসা ভাড়া নিয়েছে। আবার অনেকেই বসতঘর তৈরি করে থাকছে দীর্ঘদিন। বসবাসকারী অনেকেই ভ‚মিহীন। অনেকে নদীভাঙনে ভিটেবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সত্যিকার অর্থে ভূমিহীন হলে সরকার এই জায়গা তাদের বন্দোবস্ত দিতে পারে। তবে কোনোভাবে অবৈধভাবে সরকারি জায়গায় তারা থাকতে পারে না। এতে করে অন্য দখলদারদের সুবিধা হয়।

আনোয়ারায় উপক‚লীয় বাঁধের দুই পাশে কিছু ভূমি রয়ে গেছে। সেখানে তারা স্থাপনা তৈরি করে অন্তত তিন যুগ ধরে ভোগ করছে। জানা যাচ্ছে, এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রস্তুতি চলমান। জেলা প্রশাসক দু’জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও দিয়েছেন। সেখানে পাউবোর ভূমির পরিমাপ চলছে। যেকোনো দিন উচ্ছেদ অভিযান হতে পারে। স্থানীয় দখলদারদের বাধা উপেক্ষা করে সরকার সত্যিকার অর্থে অভিযান চালাতে পারে কি না সেটি দেখার বিষয়। যেকোনো মূল্যে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার হতে হবে।