বিখ্যাত আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ’র ‘কেউ কিছু বলতে পারে না’ নাটকে বলা হয়েছে, ‘গোলমাল বাধে খুঁটিনাটি নিয়ে’। ঢাকার অদূরে সাভারে সিটি ইউনিভর্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে থুথু ফেলার মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রত্যাশিত ও নিন্দনীয়ও বটে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দুটো বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত। গত রোববার সন্ধ্যায় স্থানীয় ব্যাচেলর প্যারাডাইস নামক হোস্টেলের সামনে সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী থুথু ফেললে তা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রের গায়ে লাগে। এ নিয়ে তর্কাতর্কি এবং একপর্যায়ে সংঘর্ষের জেরে সিটি ইউনিভার্সিটির ছয়টি ছাত্র পরিবহনের বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ মোট ১৬টি যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ভিসি অফিস, রেজিস্ট্রার অফিস, প্রোভিসি অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষে উভয় বিশ^বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে ছিল ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষের সূত্রপাতগুলোও হয়েছিল তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তাই শিক্ষার্র্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনা হালকাভাবে না নিয়ে এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না তদন্ত করে দেখা দরকার।
কিছু দিন আগেও দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়েছে। এখন অনেকের নিজস্ব ক্যাম্পাস রয়েছে। ঢাকার অদূরে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘিরে নিরাপত্তা সঙ্কট সামনে এসেছে। কারণ এ ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ডেকেও পাওয়া যায়নি বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগে দেখা গেছে।
শিক্ষা শুধু সনদ অর্জনের নাম নয়। শিক্ষা শুধু একটি চাকরি লাভের জন্যও নয়। শিক্ষার উদ্দেশ্য মনুষ্যত্ব অর্জন। শিক্ষা মানুষকে সহনশীল হতে শেখায়। জন মিল্টন বলেছেন, ‘শরীর, মন ও আত্মার সমন্বিত বিকাশ সাধনের নামই শিক্ষা’। আর মহাকবি আল্লামা ইকবাল বলেছেন, ‘মানুষের রূহের উন্নয়ন ঘটানোর প্রক্রিয়ার নামই শিক্ষা।’ ছাত্রদের যে সহিংস রূপ দেখা গেল তাতে এটিই ইঙ্গিত করে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য সাধন যেন দূরেই থেকে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয়।
অতীতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি ও অস্ত্রের ঝনঝনানির কারণে অনেকে অপছন্দ করত। সে তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশ শান্ত পরিবেশ ছিল। এমন সহিংস ঘটনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইমেজ নষ্টের অপচেষ্টার অংশ যে নয় তা জোর দিয়ে বলা যায় না।
মানুষ শিক্ষার্থীদের কাছে যে সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করে এটি তাদের মনে রাখতে হবে। একই সাথে শিক্ষার্থীরা যেন কারো ক্রীড়নক না হন সে বিষয়েও তাদের সদা সতর্ক থাকা দরকার। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।



