দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যকর করা এখনো সম্ভব হয়নি। বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনগণের বসবাস এ অঞ্চলে হলেও তাদের বিপুলসংখ্যার সুযোগ সম্মিলিতভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বেশ কয়েক দশক ধরে দেশগুলো নিজেদের মধ্যে সমঝোতার বদলে বৈরিতার চর্চা করেছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ‘সার্ক’ শুরুতে কিছুটা আশা জাগালেও বড় দু’টি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শত্রুতা এর সম্ভাবনা বিনষ্ট করেছে। এ দিকে ভারতের কাছে বাংলাদেশ কখনো ঘোষিত শত্রু না হলেও দেশটি বরাবর বৈরিতা ও বিদ্বেষের নীতি প্রয়োগ করেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে সম্পর্ক এমন জায়গায় নিয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে সুসম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে অর্থনীতি বিকাশ ও নিরাপত্তার স্বার্থে আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদারের আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
বৈরিতার নীতি পাশ কাটিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার প্রচেষ্টাও আছে। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ভারতীয় নীতির অনুসরণ করতে গিয়ে ইসলামাবাদের সাথে শত্রুতা করেছে ঢাকা। দুই দেশের জন্য লাভজনক ক্ষেত্রগুলোতেও সম্পর্ক ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ওই সব বাধা দূর করার চেষ্টা চলছে। পাকিস্তান আন্তরিকভাবে সারা দিয়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে এগিয়ে এসেছে। দেশটি সার্কের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই অঞ্চলে নতুন সহযোগিতা জোট তৈরির আগ্রহ দেখাচ্ছে। চীনের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এটি ত্রিপক্ষীয় জোট হিসেবে কাজ করবে। এ দুটো দেশের সাথে বহু ক্ষেত্র আছে, যেখানে বাংলাদেশ একসাথে কাজ করতে পারে।
ভূরাজনীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের উৎখাত করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছে না, পাশাপাশি সীমান্তে প্রতিনিয়ত আগ্রাসী ও অবিশ্বস্ত আচরণ করছে। প্রতিনিয়ত সীমান্ত হত্যা ও পুশইন করার মাধ্যমে ভারতও বৈরিতা বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও চীনের সাথে আঞ্চলিক জোট নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রশমিত করবে। এ দুটো দেশের সাথে জোট হলে অর্থনৈতিক বিকাশে সুবিধা নেয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা সঙ্কটও দূর করা যাবে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ, বিশ্বে অষ্টম বৃহৎ দেশ। পাকিস্তান ২৫ কোটি মানুষের দেশ, বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ দেশ। দুই দেশ অর্থনীতির বিশাল বাজার নিজেদের জন্য উন্মুক্ত করতে পারবে। চীনের সংযুক্তি এর সম্ভাবনা আরো বাড়াবে।
ভারতের বৈরিতা বাংলাদেশের জন্য যে নিঃসঙ্গতা তৈরি করেছে, ঢাকার কাছে তা কাটিয়ে উঠতে বেশি বিকল্প নেই। বাংলাদেশে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সাথে বৈরী হতে চায় না। কিন্তু দেশটির আধিপত্যবাদী আচরণ মেনে নেয়ার মতো নয়। তাই পাকিস্তান ও চীনের সমন্বয়ে জোট ভারতের একতরফা চাপ কমাতে কাজে আসবে। ত্রিপক্ষীয় জোটের আলোচনা হলেও এতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশকে অন্তর্ভুক্তিতে সুযোগ অবারিত রাখতে হবে।
আঞ্চলিক সম্পর্কের জটিলতায় পড়ে বাংলাদেশ বিগত দেড় দশক চরমভাবে নিষ্পেষিত হয়েছে। এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ঢাকাকে আবেগের চেয়ে বাস্তবতার আলোকে বৈদেশিক নীতি সাজাতে হবে। এর কেন্দ্রে থাকবে জনকল্যাণ ও নিরাপত্তা। পাকিস্তান ও চীনের সাথে মিলে জোটবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে সেই বাস্তবতা অর্জিত হবে আশা করা যায়।



