শিক্ষার্থীরা সময়মতো পাঠ্যবই পাচ্ছে না, এ ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয়

আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতে পাঠ্যবই পাচ্ছে না। প্রাথমিকের বই বছর শুরুর দু’য়েক মাসের মধ্যে পেতে পারে; কিন্তু মাধ্যমিকের বই পেতে ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুধবার প্রকাশিত নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রের বরাতে এমন ধারণাই তুলে ধরা হয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বিতরণের বই ছাপার কাজ মোটামুটি সম্পন্ন হওয়ার পথে। প্রাথমিকে ছাপা হচ্ছে মোট আট কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৯ কপি বই। এর মধ্যে ৮২ শতাংশের বেশি বই গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাপর্যায়ে পৌঁছেছে। আর ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ বই ছাপা হয়ে গেছে। জানুয়ারির শুরুতে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করা যাবে; কিন্তু মাধ্যমিকের বই ছাপার জন্য এখন পর্যন্ত মুদ্রাকরের সাথে চুক্তি সম্পাদনের কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি এনসিটিবি। জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিতে হলে সময় আছে মাত্র দেড় মাস। এই সময়ের মধ্যে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত চার ক্লাসের জন্য ২১ কোটির বেশি বই ছাপা, সেলাই-বাঁধাই, প্যাকিং, পরিদর্শন ও সরবরাহ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব কি না সেটিই প্রশ্ন। ২১ কোটির বেশি বই মুদ্রণে দায়িত্ব পেয়েছে মোট ১০৩টি প্রেস। এ পর্যন্ত চুক্তি করেছে ৮৮টি ছাপাখানা। মুদ্রাকর বাছাই করে তাদের সাথে চুক্তি করতে যাদের বছরের শেষ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়, তাদের হাতে জাদুর চেরাগের কোনো দৈত্য নেই যে, দেড় মাসে পর্বত সরিয়ে দেবে। নয়া দিগন্তের রিপোর্টে ধারণা ব্যক্ত করা হয়, নতুন বছরের প্রথম দিন তো দূরের কথা, মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছাতে মার্চ পেরিয়ে এপ্রিল মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। হয়তো দেখা যাবে, এনসিটিবি যেনতেন প্রকারে নিম্নমানের কাগজে যাচ্ছেতাইভাবে ছাপা-বাঁধাই করা বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে দায় সারার ব্যবস্থা করছে; কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। এ দায় শুধু এনসিটিবি নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবারই।

বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে পেলে একজন শিক্ষার্থীর মনে নতুন করে পড়ালেখা শুরুর যে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, তার কোনো বিকল্প নেই। হাজারো উপদেশ অনুশাসনেও সেই উদ্দীপনা তৈরি করা অসম্ভব। কিন্তু বই পেতে বছরের তিন বা চার মাস পেরিয়ে গেলে তার উৎসাহে কেবল ভাটা পড়ে তাই নয়, পুরো বিষয়ে রীতিমতো অনীহা জাগতে পারে। আর শিশুমনে এ ধরনের হতাশা মারাত্মক বিরূপতার সৃষ্টি করতে পারে।

বই ছাপার কাজ সম্পন্ন করতে দেরি হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে; কিন্তু সেসব কারণ যতই যুক্তিযুক্ত হোক না কেন, শিশু শিক্ষার্থীদের হতাশায় নিমজ্জিত করার পেছনে কোনো যুক্তি বা ওজরই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আপনি শিশুদের তথা জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করছেন।