বেসরকারি খাতে কর্মীদের অনিশ্চয়তা, কর্মজীবন হোক স্বস্তিকর

আমরা মনে করি, বেসরকারি খাতের অগ্রগতির জন্য সরকারের আরো মনোযোগ দেয়ার সুযোগ আছে। শ্রম দফতর এ বিষয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

দেশে বেসরকারি খাতের কর্মীদের মধ্যে আর্থিক অনিশ্চয়তা আছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে কর্মীরা বড় ধরনের উদ্বেগে ভোগেন। এর ফলে তাদের কর্মস্পৃহা কমে এবং প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হলো- বেসরকারি খাতের কর্মীদের বেশির ভাগের অবসরকালীন কোনো পরিকল্পনা না থাকা।

বড় খরচের জন্য সঞ্চয়, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে পরিবারের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ব্যয়, বাড়ি বা ফ্ল্যাট ক্রয়, ঋণ পরিশোধ ও বয়স্ক নির্ভরশীলদের ব্যয়ই তাদের প্রধান চিন্তার বিষয়।

একটি বড় বীমা কোম্পানির জরিপে জানা যায়, বেসরকারি খাতের ৩১ শতাংশ কর্মী তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। অন্য দিকে ৩০ শতাংশ কর্মী নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত। বীমা ও স্বাস্থ্যসেবামূলক বিভিন্ন সুবিধা পেলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের কর্মস্পৃহা বা আনুগত্য বাড়ে। তবে এসব সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি রয়েছে।

কোম্পানিটি তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে জরিপ করলেও মানতে হবে, এতে যেসব তথ্য উঠে এসেছে তা দেশের বেসরকারি খাতের কর্মীদের অবস্থার একটি বাস্তব চিত্র। কারণ এতে কর্মী ও নিয়োগদাতাদের অগ্রাধিকার, চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশার বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

আমাদের মনে হয়েছে, জরিপের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, কর্মীদের ৫২ শতাংশের কোনো নির্দিষ্ট অবসর পরিকল্পনা না থাকা। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে জরিপ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তৈরী পোশাক খাত, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), ব্যাংক, এফএমসিজি, টেলিকম, রিটেইলার ইত্যাদি। এর বাইরে অসংখ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে যারা কর্মীদের প্রতি মাসে ঠিকমতো বেতন-ভাতাও দিতে পারে না। জরিপের আওতা বাড়ানো হলে দেখা যাবে, অবসর পরিকল্পনা নেই এমন কর্মীর সংখ্যা বিপুলভাবে বাড়বে।

আমাদের বিবেচনায়, অবসর পরিকল্পনা না থাকার বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব আছে। কর্মীদের অনেকে যেনতেন প্রকারে অর্থাৎ নৈতিক-অনৈতিক যেকোনো উপায়ে শেষ জীবনের জন্য সঞ্চয় করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি খাতে দুর্নীতির যে ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে তার পেছনে অন্যতম কারণ কর্মীদের এই প্রবণতা।

জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৬৯ শতাংশ কর্মী মনে করেন, তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে নিয়োগকর্তার সক্রিয় ভূমিকা থাকা উচিত। ৬৭ শতাংশ কর্মী চান, প্রতিষ্ঠান যেন তাদের অবসরকালীন সঞ্চয়ে সহায়তা করে। দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও মানসিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তাতে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বিষয়ের সাথে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক আছে। কাজের চাপ বৃদ্ধি, চাকরিতে উন্নতির সুযোগের অভাব, অফিস সময়ের বাইরেও কাজের চাপ, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব, চাকরির অনিশ্চয়তা ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মীদের নির্দিষ্ট অবসর পরিকল্পনা না থাকায় তাদের ভবিষ্যৎ আর্থিক স্থিতি যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তেমনই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়ে। এসব কারণেই বাংলাদেশে শত বছর ধরে টিকে আছে এমন প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে।

আমরা মনে করি, বেসরকারি খাতের অগ্রগতির জন্য সরকারের আরো মনোযোগ দেয়ার সুযোগ আছে। শ্রম দফতর এ বিষয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিটি কর্মীর অবসর পরিকল্পনা থাকবে এটি নিশ্চিত করা দেশের স্বার্থেই জরুরি।