চল্লিশ পেরোলেই অনেক পুরুষের মাথায় দেখা দেয় টাক পড়ার সমস্যা। একসময় ঘন চুল হঠাৎই পাতলা হয়ে যেতে থাকে, যা মন খারাপ হওয়ার বিষয়। সাধারণত মনে করা হয়, টাক পড়ার পেছনে শুধু বংশগত কারণ বা চুলের যথাযথ যত্নের অভাব দায়ী। কিন্তু এ সমস্যা শুধুই তেমন নয়।
পুরুষদের শরীরে বয়সের সাথে সাথে হরমোনের ওঠানামা শুরু হয়, যার ফলে বিভিন্ন রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এই রোগগুলোর মধ্যে অনেক সময় চুল পড়া বা টাক পড়া একটি প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। তাই চুল পড়াকে অবহেলা না করে শারীরিক সমস্যার দিক থেকেও খেয়াল রাখা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুল পড়া হলে শুধু চুলের যত্ন নেয়া নয়, শরীরের হরমোনের ভারসাম্য, পুষ্টির অভাব, থাইরয়েড সমস্যা, কিংবা অন্য কোনো রোগের উপসর্গ আছে কিনা তা পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। কারণ মূল কারণ শনাক্ত করলেই সঠিক চিকিৎসা সম্ভব।
সুস্থ শরীর ও মাথার ঘন চুলের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সঠিক যত্ন প্রয়োজন।
১) আয়রনের ঘাটতি
আয়রনের ঘাটতিতে কেবল যে নারীরাই ভোগেন তা নয়, পুরুষের শরীরেও আয়রনের ঘাটতি হলে চুল উঠতে শুরু করে। ফেরিটিন নামে এক ধরনের প্রোটিন আছে যা আয়রন সঞ্চয় করে রাখে। এই প্রোটিনের তারতম্য হলে আয়রনের ঘাটতি হতে থাকে। ৪০-এর পরে ছেলেদের টাক পড়ার একটি কারণই হলো শরীরে আয়রনের ঘাটতি।
২) থাইরয়েড
থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য হলে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে। থাইরয়েড হরমোন আয়রন, ক্যালশিয়ামের মতো খনিজ শোষণ করে। এই খনিজগুলো চুলের বৃদ্ধির জন্য উপকারী। হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম- উভয় রোগের ক্ষেত্রেই চুল ঝরতে শুরু করে।
৩) অটোইমিউন রোগ
কোনো এক অজ্ঞাত কারণে শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মাথার হেয়ার ফলিকলদের শত্রু মনে করে। আর এই কারণে সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে চুল তো ঝরে পড়েই, নতুন করে চুল গজাতেও পারে না। এই রোগকে বলে ‘অ্যালোপেশিয়া অ্যারেটা’। যাদের পরিবারে থাইরয়েডের সমস্যা, শ্বেতি, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস অথবা আলসারেটিভ কোলাইটিস আছে তাদের এই সমস্যা কিছুটা বেশি দেখা যেতে পারে।
৪) হরমোনের গোলমাল
পুরুষের অ্যান্ড্রোজেন হরমোনও এর জন্য দায়ী। অ্যান্ড্রোজেন হরমোন ক্ষরণের তারতম্যে চুল উঠতে থাকে। এই হরমোনটির তারতম্য হলে চুলের গোড়া দুর্বল হতে থাকে। একে বলে ‘অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেশিয়া’।
৫) হদ্রোগও কি কারণ?
‘জার্নাল অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হেল্থ’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেশিয়া হার্টের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। যেহেতু অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের গোলমাল শুরু হয়, তাই তার থেকে মেটাবলিক সিনড্রোম ও হৃদ্রোগের আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৩০ বছর বয়সের পরেই যাদের চুল উঠে টাক পড়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাদের মেটাবলিক সিনড্রোম বা হাইপারটেশন, স্থূলত্ব বা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। আর এ সবই হার্টের উপর প্রভাব ফেলে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা