ইতিহাস বলে- কলাপাতার ব্যবহার শুরু হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে। মানে আজ থেকে ৪০০০ বছরেরও আগে মানুষ কলাপাতায় খাবার খেত। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিশ্বের নানা স্থানে কলাপাতায় খাবার খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে যায় অনেক ঐতিহ্যই। আমাদের দেশে কলাপাতায় খাবার খাওয়ার ব্যাপারটিও ঠিক তেমনই হারিয়ে যেতে বসেছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো কলাপাতার বেশ ব্যবহার থাকলেও তার ব্যবহার কমিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশের মানুষ।
বর্তমানে আমাদের দেশে কলাপাতার খাবার খাওয়ার দৃশ্য দেখা মেলে কালেভদ্রে। বরং কলাপাতার এই ব্যবহারটা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, চীনা মাটি, স্টিল কিংবা অনটাইমের প্লেট ও বাসন। তবে ভারতীয় একজন পুষ্টিবিদ জানিয়েছেন, কলাপাতাতে খাওয়াতেই বেশি উপকার।
ওই পুষ্টিবিদের নাম শ্রেয়া চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, ‘কলাপাতায় খাবার খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি যেমন পরিবেশের জন্য ভালো, তেমনই স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। প্লাস্টিক ও অন্যান্য জিনিসের পাত্রের চেয়ে কলাপাতা ব্যবহার অনেক নিরাপদ।’
কলাপাতায় খাওয়ার বিষয়ে শ্রেয়া চক্রবর্তী মোট ৬টি পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হলো-
১। কলাপাতায় খাবার খেলে শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক যাওয়ার ঝুঁকি তো থাকেই না, থাকে না রাসায়নিক বিক্রিয়ার আশঙ্কাও। ফলে কলাপাতা ক্ষতিকর তো নয়ই, বরং প্লাস্টিক বা সিন্থেটিক পাত্রে খাওয়ার থেকে উপকারী।
২। কলাপাতায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অর্থাৎ জীবাণুরোধক উপাদান। যা খাবারে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমিত হতে দেয় না।
৩। গরম খাবার কলাপাতায় পরিবেশন করা হলে কলাপাতার সুগন্ধ খাবারের সাথে মিলেমিশে একটা সুন্দর গন্ধ তৈরি করে, যা খেতে ভালো লাগে।
৪। কলাপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ক্লোরোফিল। অনেকেই মনে করেন, কলাপাতায় গরম খাবার পরিবেশন করা হলে সেই সব গুণ খাবারেও মিশতে পারে। যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবশ্য ভারতের প্রাচীনতম চিকিৎসা শাস্ত্র আয়ুর্বেদে এর গুণের কথা বলা আছে।
৫। কলাপাতায় খাবার খেলে নিজের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সাথেও জুড়ে থাকা যায়। মাটির টান অনুভব করা যায়। যা আর কিছু না হোক মন ভালো করতে বাধ্য।
৬। তা ছাড়া কলাপাতা সহজলভ্যও। গ্রামে, শহরতলিতে এটি বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। তাই এটি ব্যবহারে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে, কলাপাতা ব্যবহার করার আগে সবসময় ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।