কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে লুটপাট

খামারবাড়ির বরখাস্ত কর্মচারী আরমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

আরমান মিয়ার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায়। অফিস আদেশে বলা হয় সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে বিধি মোতাবেক তিনি খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

কাওসার আজম
খামারবাড়ির বরখাস্ত কর্মচারী আরমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
খামারবাড়ির বরখাস্ত কর্মচারী আরমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা |নয়া দিগন্ত

দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় খামারবাড়ির এক কর্মচারীকে বরখাস্তের পাশপাশি তার দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)।

সোমবার (৩০ জুন) খামারবাড়ির আলোচিত এই কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)।

আলোচিত সমালোচিত কর্মচারীর নাম মো: আরমান মিয়া। ডিএই’র সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের সহকারী হিসাব রক্ষক তিনি। কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কৃষি যন্ত্র সরবরাহকারী সিন্ডিকেটে গত সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পটি হয়ে ওঠে লুটপাটের প্রকল্পে। যার অন্যতম ছিলেন এই আরমান।

প্রকল্পের লুটপাটের টাকায় প্লট, ফ্ল্যাটসহ ব্যাংক ব্যালেন্সের মালিক হয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগও।

সংস্থাটির মহাপরিচালক মো: ছাইফুল আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, আরমান মিয়ার বিরুদ্ধে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা,২০১৮ এর ঘো) এবং সরকারি চাকরি আইন,২০১৮ এর ৩৯(১) বিধি মোতাকে তাকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। শুধু বরখাস্ত নয়, একই সাথে তার দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয় ডিএই ডিজির আদেশে।

আরমান মিয়ার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায়। অফিস আদেশে বলা হয় সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে বিধি মোতাবেক তিনি খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

আরমান মিয়ার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২০ সালের নভেম্বরের দিকে নরসিংদী জেলা অফিস থেকে খামারবাড়িতে আনা তাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের তখনকার পিডি বেনজীর আলম তাকে প্রকল্পের সহকারী হিসাব রক্ষক পদে বসান। প্রকল্পে যোগ দিয়েই তিনি প্রভাবশালী বলয় তৈরি করেন। খামারবাড়ির লুটপাটের প্রকল্প হিসেবে পরিচিত হারভেস্টার বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। আরমানের হাত দিয়েই লুটপাটের কোটি কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয় বলে অভিযোগ। গত কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে অবৈধ আয়ের টাকায় রাজধানীর মিরপুরের আমিন মোহাম্মদ গ্রপে ৫ কাঠা প্লট, মিরপুরে ইস্টার্ন হাউজিং ছয় কাঠা প্লট, প্রিয়াংকা সিটি উত্তরাতে বাসা ফাউন্ডেশনের আদী এন্টারপ্রাইজ লি: কোম্পানিতে চাকরিরত হাবিবের সাথে ১০ কাঠা প্লট, তার ব্যবহারের জন্য দুইটি প্রিমিউ গাড়ী, নরসিংদী সদরে এক বিঘা জমির উপর নির্মাণাধীন বাড়ি, গ্রামের বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন ডুপলেক্স বাড়ি এবং তার ভাইকে করে দেয়া ডুপলেক্স একটি বাড়ি এবং নামে বেনামে কয়েক একর কৃষি জমি করেছেন। এছাড়া, তার ও তার স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ির এবং তার প্রেমিকার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমানোর অভিযোগও রয়েছে।

আরমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, খামারবাড়ির যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষর জাল থেকে শুরু করে যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের সকল ধরণের অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের পিডি বেনজীর আহম্মেদ ও তারিক মাহমুদুল ইসলাম এবং ডিপিডি আলতাফুন নাহারের ছত্রছায়ায় থেকে সকল ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।