সারাদেশে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংসে মাঠপর্যায়ে অভিযান শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর এ কার্যক্রম চলছে।
পরিবেশ ও মাটির ক্ষতি করে এমন গাছ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে এসব চারা উৎপাদন, রোপণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণে কৃষি বিভাগের অধীন মাঠপর্যায়ের কর্মীরা নার্সারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে গাছের ধ্বংস করছেন। সাথে প্রতিটি গাছের জন্য দেয়া হচ্ছে চার টাকা করে প্রণোদনা। পাশাপাশি নার্সারি মালিকরা আর এই চারা উৎপাদন করবেন না এমন অঙ্গীকারও করছেন। এসব গাছের বদলে নারিকেল, আম, কাঁঠাল, নিম, তালসহ নানা দেশি গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ মে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা তৈরি ও রোপণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, অতিরিক্ত পানি শোষণ, মাটি অনুর্বর করা, আশপাশের গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়া, পাখির অনুপযোগী পরিবেশ তৈরি করে এসব গাছ। তাই দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আগ্রাসী প্রজাতির গাছের চারা রোপণের পরিবর্তে দেশী প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে বনায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এই প্রজ্ঞাপনের পর কৃষি মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ের সব উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এসব গাছের চারা শনাক্ত করে ধ্বংসের নির্দেশ দেয়। একই সাথে স্থানীয় পরিবেশের উপযোগী গাছের চারা সরবরাহ এবং কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়।
গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে কৃষি বিভাগের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নার্সারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে গিয়ে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস চারা ধ্বংস করছেন। নার্সারি মালিকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ‘আর এ গাছ উৎপাদন করা হবে না’।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) সরেজমিন উইং জানিয়েছে, সারাদেশে দুই কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার ৭৭টি আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা শনাক্ত করা হয়। এরমধ্যে আকাশমণি ৭৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮৪টি এবং ইউক্যালিপটাস এক কোটি ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৩টি। ৪৯টি জেলার ৪৩০টি উপজেলায় এই দুটি গাছের চারা ধ্বংসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বুধবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত ১৬১টি উপজেলায় ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০টি গাছের চারা ধ্বংস করা হয়েছে। ৪২টি উপজেলায় আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে, এসব উপজেলায় চারার সংখ্যা ২৪ লাখ ১০ হাজার ৭৭০টি। বাকি ২২৭টি উপজেলায় এক কোটি নয় লাখ ৪৮ হাজার ২৩১টি চারা ধ্বংস করা বাকি আছে।
ধ্বংস করা প্রতিটি চারা বাবদ কৃষকদের দেয়া হচ্ছে চার টাকা করে প্রণোদনা। এরই মধ্যে প্রায় তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। একইসাথে কৃষকদের মধ্যে নারিকেল, আম, কাঁঠাল, নিম, তালসহ ৩৩ লাখ দেশী ফলদ ও বনজ গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
ডিএই’র সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ চিহ্নিত করে ধ্বংস করছি। একইসাথে স্থানীয় পরিবেশের সাথে মানানসই, মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখে এমন গাছের চারা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। যেখানেই ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি চারা উৎপাদন বা বিপণন হবে, সেখানেই সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ যাতে ভবিষ্যতে এই গাছের চারা উৎপাদন না করেন, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।