মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সেমিনার

অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগে মাটির উৎপাদনশীলতা কমছে

চট্টগ্রামে ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহার করায় মাটিতে ফসফরাসের পরিমাণ বাড়ছে। তা ছাড়া রংপুর অঞ্চেলের দুই লাখ ৭৮০ হাজার হেক্টর জমি অম্লতা পাওয়া গেছে। এতে মাটির উর্বতা কমছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক

Location :

Dhaka
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সেমিনার
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সেমিনার |নয়া দিগন্ত

অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মাটির স্বাস্থ্য ও গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। এতে ব্যয় বাড়ছে ও ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমছে জানিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘কৃষকরা না জেনে বা কৃষিবিদদের পরামর্শ না শুনে ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে বেশি বেশি করে সার প্রয়োগ করছেন। কোথাও কোথাও এ সারের ব্যবহার তিন থেকে চার গুণ বেশি দাঁড়াচ্ছে। তা ছাড়া ফসলকে রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে অধিক পরিমাণে কীটনাশকের প্রয়োগ করছেন। তাতে করে উপকারী পোকা-মাকড় মারা যাচ্ছে। জমির উর্বরত কমে যাচ্ছে।’

রোববার (১ জুন) রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) বার্ষিক কর্মশালায় মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা দেশের বিভিন্ন বিভাগের এ তথ্য উপস্থাপন করেন।

এসআরডিআই’র মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে দুই দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: ছাইফুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) ড. নাজমুন নাহার করিম প্রমুখ।

প্রথম দিনে বিভাগভিত্তিক মাটি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। খুলনা বিভাগের উপস্থাপনায় বলা হয়েছে চলতি অর্থবছরে তিন হাজার আইটেমের মাটি পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে তিন হাজার ৩৮৭টি মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, খুলনার কৃষকরা প্রয়োজনের চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি সার ব্যবহার করছে। আধা কেজি জিঙ্ক সারের জায়গায় আট কেজি দস্তা ব্যবহার করছে। এমনকি গুঁড়া চুনকে সালফার হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব সার ফসলে প্রয়োগ করায় গাছের পাতা পুড়ে যায়।

সিলেটের মোট জমির ৯৫ শতাংশই অম্লিয় মাটিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে ফসফরাসের ব্যবহার বাড়ছে। আর ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধো ২৬০টি সারের স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, এই সময়ের মধ্যে জিংঙ্ক সারে ৫৩ শতাংশ ভেজাল পাওয়া গেছে।

বরিশাল বিভাগের উপস্থাপনায় বলা হয়, এ অঞ্চলের সারের মধ্যে ৮৩.৬৩ শতাংশ ভালো ও ১৬.৩৭ শতাংশ ভেজাল সার পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের উপস্থাপনায় বলা হয়, চট্টগ্রামে ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহার করায় মাটিতে ফসফরাসের পরিমাণ বাড়ছে। তা ছাড়া রংপুর অঞ্চেলের দুই লাখ ৭৮০ হাজার হেক্টর জমি অম্লতা পাওয়া গেছে। এতে মাটির উর্বতা কমছে।

কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান মানহীন সারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা জানতে পেড়েছি অনেক জায়গায় ডিলাররা মানহীন সার সরবরাহ করছে। এতে জমির স্বাস্থ্যহানী হচ্ছে ও ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।’

তিনি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান সারে ভেজাল দেয়াদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? তখন কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ৫০টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের সব প্রতিষ্ঠান স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হতে পারে সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। কেউ প্রচুর কাজ করবে আর কেউ কোনোমতে দিনাতিপাত করবে তাহলে এ খাতে উন্নয়ন করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকতে হবে তেমনি মাটির স্বাস্থ্যও ভালো রাখতে হবে। তা না হলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে।’

কৃষির জন্য প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে মাটির স্বাস্থ্য ঠিক রাখা উল্লেখ করে কৃষি সচিব বলেন, ‘মাটির স্বাস্থ্য সঠিক না হলে সব ধরনের ফসল উৎপাদনে ঘাটতি হবে। তাতে করে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘কৃষির মোট বাজেটের ৭০ শতাংশই সারে ভর্তুকিতে চলে যায়। সেখানে আমরা সার প্রয়োগ কমাতে পারলে অনেক টাকা বেঁচে যাবে।’

এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘এখন কৃষির ব্যবস্থাপনা পাল্টে যাচ্ছে। লিজ দেয়া জমি নিয়ে চাষিরা নিজের টাকা তুলতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে জমির স্বাস্থ্য নষ্ট করছে। এ বিষয়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য জমিতে কীটনাশক কি পরিমাণ প্রয়োগ করবে তা কৃষককে নির্ধারণ করে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বছরে চার হাজার কোটি টাকার বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করি কিন্তু সেখানে ১০ শতাংশ সত্যিকার কৃষক পায় না। তারা ভালো বীজ পায় না। অথচ ভালো বীজ পেলে ১০ শতাংশ উৎপাদন বেড়ে যাবে।’