শেখ হাসিনার মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে ট্রাইব্যুনালে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জেরা শুরু হয়।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা |সংগৃহীত

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদানকারী শেষ সাক্ষী মো: আলমগীরকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জেরা শুরু হয়।

রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো: আমির হোসেন আসামিপক্ষের হয়ে জেরা করছেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে রয়েছেন গাজী এমএইচ তামিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা।

এর আগে, সোমবার তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরকে দিনভর জেরা করা হয়। জেরা শেষ না হওয়ায় তা আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আবারো জেরা চলছে।

আলমগীর এ মামলার ৫৪তম এবং সর্বশেষ সাক্ষী। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় ৪১টি জেলায় ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দিতে তিনি যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রদর্শন করেন, যেখানে আন্দোলনের নৃশংসতা তুলে ধরা হয়। একইসাথে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের চিত্রও উপস্থাপন করা হয়।

তিনি জানান, ওই সময় ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল। এসব তথ্য বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এছাড়া বিবিসি, আল-জাজিরা ও আমার দেশে প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়।

উল্লেখ্য, ২৮ সেপ্টেম্বর আলমগীরের জবানবন্দি শুরু হয়। ওই দিন তার জব্দ করা ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়, যেখানে জুলাই-আগস্টের নির্মমতা ফুটে ওঠে। সব মিলিয়ে ২৫ কার্যদিবসে মামলাটিতে মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষ হলে যুক্তিতর্ক ও রায়ের দিকে অগ্রসর হবে মামলাটি।

২৪ সেপ্টেম্বর মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেন এবং তাকে জেরা করেন আমির হোসেন।

মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বীভৎস চিত্র উঠে এসেছে। শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এসব ঘটনার জন্য শেখ হাসিনা, কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে মামলার প্রতিবেদন জমা দেন।