অ্যাডভোকেট শিশির মনির

শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার দ্রুত রায় বিচার বিভাগের বড় সাফল্য

স্বল্প সময় বিচার সম্পন্ন করার যে নজির স্থাপন হলো সেটি যেন ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বিচার বিভাগে এই প্রত্যাশা প্রকাশ করেন শিশির মনির।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
অ্যাডভোকেট শিশির মনির ও আছিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ (ডানে)
অ্যাডভোকেট শিশির মনির ও আছিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ (ডানে) |বাসস

চাঞ্চল্যকর শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার দ্রুত রায় বিচার বিভাগের একটি বড় সাফল্য, এতে সন্তোষ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

শনিবার (১৭ মে) তার ভেরিফাইড ফেসবুকে তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘মামলার বিচার শেষে যার যতটুকু শাস্তি ততটুকুই হতে হয়। আবেগ দিয়ে বিচার চলে না।’

তিনি বলেন, ‘দ্রুত বিচার পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। দেখা গেছে কোনো-কোনো মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় ১০-১৫ বছর সময় কিংবা তারও বেশি সময়ক্ষেপণ হয়। এতে করে বিচারের প্রাসঙ্গিকতা আর থাকে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আরো যেসব চাঞ্চল্যকর মামলা রয়েছে, ওইসব মামলায় সাক্ষ্য সংগ্রহ সম্ভব হলে দ্রুত বিচার নিশ্চিতে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।’

অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘অতীতে আমরা দেখেছি বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলায় গণহারে সাজা দিতে।’

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড ও অন্যদের খালাস রায়ে খুশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দোষীকে শাস্তি এবং নিরাপরাধের খালাসই ন্যায়বিচার।’

তিনি বলেন, ‘সংক্ষুদ্ধ পক্ষগণের আপিলের সুযোগ রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দ্রুত বিচার করতে গিয়ে যেন নিরপরাধ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটিও দেখতে হবে।’

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানান শিশির মনির। স্বল্প সময় বিচার সম্পন্ন করার যে নজির স্থাপন হলো সেটি যেন ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বিচার বিভাগে এই প্রত্যাশা প্রকাশ করেন তিনি।

এর আগে, আজ মাগুরায় চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারিক আদালত। সেইসাথে মামলার অন্য তিন আসামিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান আসামিদের উপস্থিতিতে আজ এই রায় ঘোষণা করেন।

সরকারপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের জানান, ‘১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, মেডিক্যাল এভিডেন্স ও সাক্ষীদের বক্তব্যে প্রধান আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আশা করেছিলাম, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, সেটাই হয়েছে।’

চলতি বছরের ৬ মার্চ বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। পর দিন সকালে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় শিশুটির মা ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।

গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যু) অভিযোগ গঠন করা হয়। শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হলেও এ সব অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন তারা।

গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু এবং ১৩ মে যুক্তি-তর্ক শেষে আজ ১৭ মে রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়। বাসস