বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন

বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ তদন্ত প্রমাণিত হওয়ায় ১৭টি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পায় তারা।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পেয়েছে সিআইডি
বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পেয়েছে সিআইডি |সংগৃহীত

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পেয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ তদন্ত প্রমাণিত হওয়ায় ১৭টি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পায় তারা।

রোববার (৯ নভেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং অন্যান্য সহযোগীগণ মোট ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে এই অর্থ পাচারের সাথে যুক্ত ছিলেন।

এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক পিএলসি, মতিঝিল শাখা, ঢাকা থেকে এলসি বা বিক্রয় চুক্তির ব্যবস্থা করেছিল, তবে রফতানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত নিয়ে আসেনি। এভাবে রফতানির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুবাইয়ের আর আর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে চলে যেত সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউকে, ইউএসএ, আইয়ারল্যান্ডসহ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। আর আর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের মালিকানা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এ এস এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে নিবন্ধিত।

এই প্রক্রিয়ায় ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৯৬,৯৬,৬৮০ মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) রফতানি দেখানো হয়েছে কিন্তু রফতানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি; অর্থাৎ রফতানিমূল্য প্রত্যাবাসন না করে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সিআইডি বাদি হয়ে গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে মতিঝিল থানায় ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করে।

ইতোমধ্যে এসব মামলা সংক্রান্তে আদালতের আদেশে আসামিদের বিভিন্ন সম্পদ ক্রোক করেছে সিআইডি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা জেলার দোহার থানার ২ হাজার শতাংশ জমি ও তদস্থিত স্থাপনাসমূহ, গুলশানের ‘দ্য এনভয়’ বিল্ডিংয়ের ৬ হাজার ১৮৯.৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশান আবাসিক এলাকার ৬৮/এ রাস্তার, ৩১ নম্বর প্লটে অবস্থিত ২ হাজার৭১৩ বর্গফুটের আরও একটি ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট। এছাড়া সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পাশাপাশি তাদের বিদেশ গমনও রোধ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্রোককৃত সম্পত্তির বর্তমান আনুমানিক মূল্য ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা।

উল্লিখিত ১৭টি মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তি ও জড়িত মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত শেষে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের নিমিত্তে সিআইডি প্রধান কর্তৃক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, উক্ত আসামিদের মধ্যে জেল হাজতে থাকা সালমান এফ রহমানকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার ওয়াসিউর রহমানকে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে গ্রেফতার করে সিআইডি।

ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশে পাচারের ঘটনা উদঘাটনসহ তদন্ত সংক্রান্ত অন্যান্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক দ্রুততম সময়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে দায়েরকৃত ১৭টি মামলায় বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের কার্যক্রম শেষ করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

মানিলন্ডারিংয়ের মতো জটিল ও সময়সাপেক্ষ ১৭টি মামলার তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন করেছে।

রাষ্ট্রের অর্থপাচারে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীদের আইনের আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণে সিআইডির এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়াও, আজ রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো: ছিবগাত উল্লাহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।

সূত্র : বাসস