খায়রুল হককে অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের

গ্রেফতার না হওয়ায় স্বরাষ্ট্র-আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি ক্ষুব্ধ আইনজীবী সমাজ : কায়সার কামাল

বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি না করায় দেশের আইনজীবী সমাজ হতাশ ও ক্ষুব্ধ বলে জানান ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সংবাদ সম্মেলন
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সংবাদ সম্মেলন |নয়া দিগন্ত

দেশের বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। একইসাথে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার রক্ষায় আমরা অবিলম্বে উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ বিচারকদের অপসারণ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

রোববার (২৭ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং সংগঠনটির মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ দাবি জানান।

বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি না করায় দেশের আইনজীবী সমাজ হতাশ ও ক্ষুব্ধ বলে জানান ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। অন্যথায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আইনজীবী সমাজকে সাথে নিয়ে আরো কঠোর কর্মসূচি পালন করবে।’

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

বক্তব্যে বলা হয়, ‘দাবির স্বপক্ষে সারাদেশের আইনজীবীদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সারাদেশের সকল জেলা বারে আইনজীবীদের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হবে। এবং দাবি পূরণ না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে বিজয়ের পরে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমাদের প্রত্যাশা ছিল ফ্যাসিবাদী শাসক যেভাবে দেশ থেকে পলায়ন করেছে, সেই ফ্যাসিবাদের দোসর উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতের বিচারকগণও স্ব-স্ব পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেবেন। অথবা, ছাত্র-গণআন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান অন্তবর্তী সরকার বিচারাঙ্গনকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করবে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করার কথা ছিল।’

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। অজ্ঞাত কারণে অদ্যাবধি তাকে গ্রেফতার বা বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। অথচ তার বিচার বাংলাদেশের জনগণের গণদাবি। এক্ষেত্রে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগই এখন পর্যন্ত নেননি।’

‘৫ আগস্টের পর আট মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণের পরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ছাত্র-জনতা ও গণতন্ত্রকামী আইনজীবীদের আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ অদ্যাবধি ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি। ইতিমধ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত ও ফ্যাসিবাদী ১২ জন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের যেসব বিচারপতি বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে আওয়ামী লীগের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে সরাসরি জড়িত ছিলেন তাদেরকেও অপসারণ করা হবে।’

‘২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণাকারী বিচারপতিও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। অথচ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা ছিল তাদের প্রত্যেকের সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনী বৈতরণী পার করানোই ছিল এসব বিচারপতির মূল উদ্দেশ্য।’

‘পৃথিবীর সকল সভ্য দেশে কোনো নাগরিকেরই বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয় না। অথচ এই সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একাধিক বিচারপতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যেকোনো ধরনের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।’

‘একজন বিচারপতি কতটা নির্লজ্জ না হলে আদালতের এজলাসে নিজে একটি দলের দলীয় প্রধানের প্রতিকৃতি স্থাপন করে তা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। অতীতে সুপ্রিম কোর্টের এজলাস ভাংচুর, প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মেরেছে এমন নির্লজ্জ দলীয় ক্যাডাররাও বিচারপতি হিসেবে বহাল রয়েছেন।’

‘এদেশের জনপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধান এবং স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘ডাকাত দলের প্রধান’ হিসেবে আখ্যাদানকারী বিচারপতিও বিচারকর্মে এখনো নিযুক্ত রয়েছেন।’

‘বিগত ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার তার অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য নগ্নভাবে আদালতকে ব্যবহার করেছিল। উচ্চ আদালত এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের নির্লিপ্ততা এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণে র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো গুম, খুন, নির্যাতন করার উৎসাহ পায়। ফ্যাসিবাদী বিচারকগণ এই দায় এড়াতে পারেন না। সারা দেশের হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিককে মিথ্যা মামলায় আটকাদেশ প্রদান, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের আদেশ প্রদান, এমনকি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুম-খুনের সহযোগী হিসেবেও নির্লজ্জ আদেশ প্রদান করেছেন অধস্তন আদালতের কিছু উচ্চাভিলাষী বিচারক। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এসব দলবাজ বিচারক বেছে বেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় কোনোরকম সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যতিরেকে অথবা পাতানো সাক্ষীর সাক্ষ্য দেখিয়ে, আদালতের নির্ধারিত সময়ের পরে রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালিয়ে তথাকথিত বিচারের নামে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছেন। এধরনের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। অথচ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এসব দল ও দুর্নীতিবাজ বিচারককে অপসারণ ছিল অতি জরুরি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা করা হয়নি।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দস কাজল, আবদুল্লাহ আল মামুন, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, মোহাম্মদ আলী, মো: আক্তারুজ্জামান, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, আবদুল্লাহ আল মাহবুব, মো: মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ।