জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল আজ। তবে সাক্ষী না আসায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে আগামী ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার পর এ দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-২। এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। পরে আবেদন মঞ্জুর করে নতুন দিন ধার্য করেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
গত ১৩ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের কথা ছিল। তবে সাক্ষী হাজির করতে পারেনি প্রসিকিউশন। এজন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম।
এর আগে, গত ৬ অক্টোবর নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন জবানবন্দি দেন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক। তারা হলেন এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল। দু’জনই জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে তাদের জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে চার স্টেট ডিফেন্সসহ গ্রেফতারদের আইনজীবীরা।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম ও আবদুস সোবহান তরফদার। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর অষ্টম দিনের মতো সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন জবানবন্দি দিয়েছেন তিনজন। ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে প্রথমে ছয় নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়া সিয়াম আহসান আয়ানকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেন আয়ান। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনিই আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিতে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসেন। নিজের সাক্ষ্যেও পুরো বর্ণনা তুলে ধরেছেন এই সাক্ষী।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর পঞ্চম দিনের মতো জেরা শেষ হয়। ওইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ান আনিসুর রহমানকে জেরা করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর চতুর্থ দিনে পাঁচ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি। একইদিন এসআই মো: তরিকুল ইসলামও জবানবন্দি দেন।
৮ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়া রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলামের জেরা শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ৭ সেপ্টেম্বর তিনি জবানবন্দি দেন। ওইদিন দ্বিতীয় সাক্ষী রংপুরে কর্মরত এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট একেএম মঈনুল হককেও জেরা করা হয়।
গত ২৮ আগস্ট জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। একইদিন সাংবাদিক মঈনুল হকও সাক্ষ্য দেন।
এ মামলার গ্রেফতার ছয় আসামি হলেন এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ।
গত ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এ মামলায় বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন এখনো পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে গত ২২ জুলাই সরকারি খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়।
গত ৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত চার আইনজীবী। এর মধ্যে পাঁচজনের হয়ে লড়েন আইনজীবী সুজাত মিয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুনুর রশীদ। এছাড়া শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলাম। ২৯ জুলাই তিন আসামির পক্ষে শুনানি হয়। এর মধ্যে শরিফুলের হয়ে লড়েন আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো। কনস্টেবল সুজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু ও ইমরানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সালাহউদ্দিন রিগ্যান।
২৮ জুলাই এ মামলার ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ৩০ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। আর ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৬২ জন।
 


