জামায়াত নেতা আজহারের সংক্ষিপ্ত রায়ে যা রয়েছে

‘যদি অন্য কোনো মামলা বা আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তাকে আটক রাখা আবশ্যক না হয়, তাহলে তাকে অবিলম্বে কারামুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হলো।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
এটিএম আজহারুল ইসলাম
এটিএম আজহারুল ইসলাম |সংগৃহীত

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

এ রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ। অন্যরা হলেন- বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো: রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

এ মামলায় আপিলকারীর পক্ষে ছিলেন- ব্যারিস্টার এহসান এ. সিদ্দিক (সিনিয়র অ্যাডভোকেট) সহ আরো কয়েকজন সিনিয়র ও জুনিয়র আইনজীবী।

বিবাদীর পক্ষে ছিলেন- গাজী মনোয়ার হোসেন তামীম এবং অন্যান্য আইনজীবীবৃন্দ।

৬ ও ৮ মে এ মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে আজ ২৭ মে রায় ঘোষণা করা হয়।

রায় ঘোষণায় বলা হয়, ক্রিমিনাল আপিল নং ১২/২০১৫ এ আপিল বিভাগের ৩১.১০.২০১৯ তারিখের পূর্ববর্তী রায় ও আদেশ পর্যালোচনা করে বাতিল করা হলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৩০.১২.২০১৪ তারিখে প্রদত্ত দণ্ডাদেশ ও রায় (আইসিটি-বিডি কেস নং ৫/২০১৩) বাতিল করা হলো।

রায় ঘোষণায় আরো বলা হয়, উপস্থাপিত প্রমাণাদি ও আইনি উপস্থাপনার পূর্ণাঙ্গ পুনর্মূল্যায়নের পর আপিল বিভাগ মনে করে, আপিলকারীর দণ্ডাদেশ ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার মৌলিক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের মাধ্যমে হয়েছে, যার কারণে গুরুতর বিচারিক বিভ্রাট ঘটেছে।

এছাড়াও, আদালত স্বীকার করে যে- পূর্ববর্তী রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি এবং এই গুরুতর বিচ্যুতি বিচার ব্যবস্থায় এক চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।

এতে আরো বলা হয়, এই বিভাগ গভীর দায়িত্ববোধ থেকে আরো স্বীকার করে, পূর্ববর্তী রায়ে মামলার প্রমাণের দুর্বলতা ও প্রেক্ষাপটকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি, যা বিচারিক নিরপেক্ষতা ও সততার মানদণ্ড থেকে পিছিয়ে ছিল। এই কারণে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপিলকারীর দণ্ড ও রায় বহাল রাখা যায় না।

আপিল বেঞ্চ উল্লেখ করেন, এই আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক আইনের প্রাসঙ্গিক দিকগুলোকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়নি, যা বিচার বিভাগের একটি গুরুতর কর্তব্য ছিল। এই ব্যর্থতা বিচার বিভাগের দায়িত্বে একপ্রকার অবহেলার পরিচয় বহন করে।

সবদিক বিবেচনা করে আপিল বেঞ্চ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায়- আপিলকারীকে সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হলো। যদি অন্য কোনো মামলা বা আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তাকে আটক রাখা আবশ্যক না হয়, তাহলে তাকে অবিলম্বে কারামুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হলো।

রায় ঘোষণায় আরো বলা হয়, এই আদেশের একটি অগ্রিম অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হলো।

বিস্তারিত রায় পরে প্রদান করা হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহার। শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। পরে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন এই জামায়াত নেতা।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে ওই বছরের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনে ফের আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত দেন। এটাই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা, যেটি রিভিউ পর্যায়ে আসার পর ফের আপিল শুনানির অনুমতি পায়।

গত ৮ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ২৭ মে দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট রায়হান উদ্দিন ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।

তার আগে, গত ৬ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের প্রথম দিনের শুনানি শেষ হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারের বাসা থেকে আজহারকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে আছেন।