ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, এমন রায় প্রত্যাশা করছি : তাজুল ইসলাম

যে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে, জনগণ যখন জেগে থাকে, সে দেশের ভাগ্য নিয়ে, সে দেশে নৈরাজ্য করার সাহস, শক্তি, কারোই কোনোদিন ছিল না, হবেও না।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম |ইন্টারনেট

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম যে যারাই বাংলাদেশে যত শক্তিশালীই হোক না কেনো, যদি কেউ অপরাধ করে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করে, তাদের সঠিক পন্থায় বিচারের মুখোমুখি করা হবে এবং তাদের আইন অনুয়ায়ী যে প্রাপ্য, তা বুঝিয়ে দেয়া হবে। সেই প্রক্রিয়ায় আমরা একটা দীর্ঘ যাত্রা শেষ করেছি, এখন চূড়ান্ত পর্বে উপনীত হয়েছি। আশা করছি, ইনশা আল্লাহ আগামী ১৭ নভেম্বর আদালত তার সুবিবেচনা, তার প্রজ্ঞা প্রয়োগ করবেন। এই জাতির বিচারের জন্য যে আকাঙ্ক্ষা, যে তৃষ্ণা তার প্রতি সুবিচার করবেন। এবং একটি সঠিক রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ইতি ঘটাবেন। ভবিষ্যতের জন্য রায়টি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, তেমন একটি রায় প্রত্যাশা করছি।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমরা আদালতের কাছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আবেদন করেছি। আদালত সুবিবেচনা প্রয়োগ করবেন। তবে আমাদের পক্ষ থেকে প্রেয়ার হচ্ছে যে এই অপরাধের দায়ে আসামিদের যেন সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরাসরি যদি কেউ বিচার প্রক্রিয়া বানচালের জন্য কোনো হুমকি দেন, কোনো কার্যক্রম করেন, ডেফিনেটলি সেটা আদালতের প্রসেস, আদালতের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা উস্কানি দিবেন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করবেন, সে ব্যাপারে আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, যে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে, জনগণ যখন জেগে থাকে, সে দেশের ভাগ্য নিয়ে, সে দেশে নৈরাজ্য করার সাহস, শক্তি, কারোই কোনোদিন ছিল না, হবেও না। আমরা বাংলাদেশের জনগণের দেশপ্রেম, তাদের প্রজ্ঞা, তাদের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশের সরকারের বিভিন্ন সংস্থা-বাহিনীর প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আশা করি, যা কিছু বিছিন্নভাবে ঘটছে, তার কোনোকিছুর প্রভাব পড়বে না। সবকিছু স্মুথলি হবে। বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে।

তাজুল ইসলাম বলেন, এই মামলার চূড়ান্ত পর্যায়ে আসার পেছনে আমাদের প্রসিকিউশনের যে সমস্ত সদস্যবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি, আমাদের তদন্ত সংস্থার যে সমস্ত তদন্তকারী কর্মকর্তাবৃন্দ তারাও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এটাকে একটা যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য তাদের প্রতি; ভিক্টিম পরিবার, সাক্ষী যারা দিয়েছেন, যারা নেপথ্যে কাজ করেছেন; সর্বোপরি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, যারা এই বিচার প্রক্রিয়ায় পেছনে থেকে এই বিচার প্রক্রিয়ায় সমর্থন করেছেন সাহস জুগিয়েছেন, তথ্য দিয়েছেন এবং ধৈর্য ধরে আজকে এই মামলাটিকে রায়ের পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে আসার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেছেন, সেই গোটা জাতির প্রতি প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাস জানাচ্ছি।

এর আগে, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলার রায় আগামী ১৭ তারিখ (সোমবার) ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আজ বেলা ১২টার পরে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন।

ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো: শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ প্রমুখ।