ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
সকালে মাহমুদুর রহমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে। তবে তিনি মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সাক্ষ্য দেবেন বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
এ মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, তবে তিনি রাজস্বাক্ষী হয়েছেন।
২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ডের দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে ৪৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। প্রসিকিউশন বলছে, আর কয়েকজনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যদিয়ে এ মাসেই শেষ হবে এ অধ্যায়।
এর আগে, এ মামলার ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম শুনানি করেন। অন্য প্রসিকিউটররাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এই মামলায় পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। আর গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজসাক্ষী হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরো দু’টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়। অন্য মামলাটি হয় রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।